তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপরে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ আবারও পানিবন্দি

Slider জাতীয়


হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৩৭ সেন্টটিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার ৫ উপজেলায় তিস্তা তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষজন আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

পরিবার গুলোর মাঝে খাবার ও বিশুন্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি হুহু করে বৃদ্ধিতে তিস্তাপাড়ের হাজারও মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। শুরু হয়েছে কান্নার রোল।

শনিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় লালমনিরহাটের দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। সকাল ৯ টায় ২৪ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২ টায় ২০ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ৪৪ টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গত শুক্রবার সন্ধায় ৬টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ও রাত ৯টার দিকে ৩৫ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়েছে। পানির প্রবাহ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বন্যায় তিস্তা নদীর এটাই সর্বোচ্চ পানি প্রবাহের রেকর্ড।

তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,কালীগঞ্জ উপজেলার,চর বৈরাতী,ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সিদুর্ণা, গড্ডিমারী, দোয়ানী,ধুবনী, ডাউয়াবাড়ি এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের ৫০ হাজারের অধিক মানুষ আবারও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এসব এলাকার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বহু কাঁচা-পাকা সড়কে পানি উঠে পড়ায়।

লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমার ইউনিয়নের ধুবনী এলাকার ভেসীর বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছেন। তিস্তার প্রবল ¯স্রোতে যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। স্থানীয়রা বালির বস্তা ফেলে ভাঙ্গান রোধে কাজ করছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন জানান, গতরাত থেকে বালু বস্তা ফেলে গড্ডিমারীর একমাত্র সড়কটি রক্ষা করেছি। তিস্তার ¯স্রোতে উপজেলার সাথে যোগাযোগের সড়কটি যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।

জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে তিস্তার ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা ক্রমে কমে গিয়ে বন্যার উন্নতি ঘটে। কিন্তু এক সাপ্তাহে না যেতেই ফের উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার থেকে বর্তমানে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে।

এছাড়া তিস্তা-ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

হাতীবান্ধার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ জানান, হাতীবান্ধার পানি বন্দি পরিবার গুলো তালিকা করা হয়েছে তারা দ্রুত ত্রাণ পাবে আশা করি।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সকালে পানি বৃদ্ধি কমে এলেও বিকেল থেকে আবারো পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা পাড়ের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর জানান, জেলায় তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বন্দী হয়ে পড়া পরিবার গুলোর জন্য ১২৪ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ও নগত অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *