ঢাকা:করোনার এই সঙ্কটে বন্ধ হওয়ার পথে দেশের ২৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেসরকারি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেক কিন্ডারগার্টেন আর্থিক দুরাবস্থার কারণে ইতোমধ্যে বন্ধও করে দিয়েছেন মালিকরা। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বিক্রিও করে দিচ্ছেন কেউ কেউ। একদিকে ভাড়া বাড়ি অন্য দিকে শিক্ষকদের বেতনের টাকার সংস্থান করতে না পেরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা বিক্রি করারও উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেকে। এই অবস্থায় দেশের ৪০ হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে একটি অংশের মালিকদের সংগঠন কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন আজ বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। মালিকরা বলছেন, করোনার এই সঙ্কটে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক কোনো প্রণোদনা না পেলে কিন্ডারগার্টেনগুলোর ৬০ ভাগ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
কিন্ডারগার্টেন মালিকদের অনেকে জানান, দেশে করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ রয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টিউশন ফি, মাসিক বেতন আদায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এর পরেও মানবিক বিবেচনায় আমরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন কমবেশি পরিশোধ করে আসছি কিন্তু এখন আর পারছি না। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ভাড়া বাড়িতে চালানো হচ্ছে। আয়ের বড় একটি অংশ ভাড়া পরিশোধেই চলে যায়। কিন্তু গত চার মাসে যেখানে আমরা একটি টাকা আয় করতে পারছি না সেখানে এত বড় অংকের ব্যয় আমরা কিভাবে বহন করব। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যাতে আমাদের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে কিছুটা সহযোগিতা করেন।
এ দিকে প্রণোদনার দাবিতে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকরা দেশব্যাপী এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। আজ বুধবার এই কর্মসূচি পালন করা হবে। সূত্র জানায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং দেশের সব উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান সরকার গতকাল মঙ্গলবার নয়া দিগন্তকে জানান, করোনা দুর্যোগের সময় শিক্ষকরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষকদের কষ্ট সামান্য হলেও লাঘব করতে আমরা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ প্রণোদনা চেয়ে আসছি কিন্তু আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তাই আমরা আজ সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের দাবি সরকারের কাছে পেশ করতেই এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি। যদিও গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিন্ডারগার্টেনে টিউশন ফি আদায় হয়নি, যা দিয়েই চলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। এই পরিস্থিতিতে পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। কিন্ডারগার্টের মালিকরা জানান, গত মার্চ মাস থেকে আমাদের কোনো আয় নেই। যে কারণে শিক্ষকরা বেতনও পাচ্ছেন না। অনেক মালিক স্কুল বন্ধ করে দিয়েছেন। শিক্ষকরা বেকার হয়ে নানা কাজ করছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আমরা দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাতীয় স্বার্থে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখতে এবং শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানান তারা।