ডেস্ক: জয়শ্রীকে খুব মনে পড়ে। জয়শ্রী ছিলেন সত্তর দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা দশটি সিনেমার মধ্যে দুটি সিনেমা—সীমানা পেরিয়ে ও রুপালী সৈকতের নায়িকা তিনি। কিন্তু সময় খুব নিষ্ঠুর। সবকিছু বিস্মৃত করে দেয়।
পুরো নাম জয়শ্রী রায়। পড়তেন কোলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। এই স্কুলে পড়তেই তিনি ১৯৬৮ সালে নির্বাচিত হন মিস কোলকাতা। পরের বছর ১৯৬৯ সালে তিনি সত্যজিৎ রায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। অর্থাৎ, সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই তাঁর সিনেমায় অভিষেক ঘটে। উত্তম কুমারের সঙ্গেও তিনি অভিনয় করেছেন।
১৯৭৪ সালে বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর কবিরের সূর্যকন্যা সিনেমায় অভিনয় করতে তিনি বাংলাদেশে আসেন। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এই সিনেমার শ্যুটিং করতে করতেই জয়শ্রী রায় ও আলমগীর কবির প্রেমে পড়েন। ‘৭৫ সালে তাঁদের প্রেম রুপ নেয় পরিণয়ে। রায় থেকে হয়ে যান জয়শ্রী কবির।
আলমগীর কবির তাঁর প্রথম স্ত্রী মঞ্জুরা বেগমকে তালাক দিয়ে বিয়ে করেন জয়শ্রীকে। ১৯৭৭ সালে সীমানা পেরিয়ে মুক্তি পায়। জয়শ্রীর লিপে ‘বিমূর্ত এই রাত্রী আমার মৌনতার সুতোয় বোনা একটি রঙিন চাদর’ গানটি তাঁকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত রুপালী সৈকতে।
জয়শ্রী বাংলাদেশে ছিলেন একযুগের বেশি। এদেশের শিক্ষিত ও রুচিশীল দর্শকদের মনে তিনি একটি স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন। কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝি আলমগীর কবিরের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে।
বিচ্ছেদ শেষ পর্যন্ত তালাকে গড়ায়। দারুণ হতাশায় পড়েন জয়শ্রী। তাই শিশুপুত্রকে নিয়ে ফিরে যান কোলকাতায়। কিন্তু কোলকাতায় গিয়েও তিনি আর সিনেমায় ফেরেন নি। কিছুদিনের মধ্যেই ছেলে লেনিন সৌরভ কবিরকে নিয়ে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। বর্তমানে তিনি লন্ডনের সিটি কলেজে ইংরেজি পড়ান।
জয়শ্রীর জন্ম ১৯৫১ সালের ২২ জুন। তিনি ইংরেজীতে অনার্সসহ মাস্টার্স করেছিলেন।
তিনি খুব ন্যাচারাল অভিনয় করতেন। ডাগর ডাগর চোখের জয়শ্রী ছিলেন খুব আকর্ষণীয়। যেন চোখই কথা বলতো।
তাঁর এলোচুলও ছিলো বিরাট সৌন্দর্য।
ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে তিরিশটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
খুব কম সিনেমায় অভিনয় করলেও তাঁকে এখনো মনে রেখেছেন বাংলাদেশের মানুষ।
কারণ, তিনি অন্য নায়িকাদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি সিনেমায় যে মুগ্ধতা রেখে গেছেন, দর্শকদের সেই ঘোর এখনো কাটে নি।