সারাদেশে যৌথবাহিনীর চিরুনি অভিযান শুরু

Slider জাতীয়

101885_IGP
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধে চলমান সহিংসতার লাগাম টেনে ধরতে রোববার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর চিরুনি অভিযান (কম্বিং অপারেশন)। অভিযান পরিচালনার সবধরনের প্রস্তুতি থাকলেও বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হওয়ার জন্য এতদিন অপেক্ষা করা হচ্ছিল। রোববার দুপুরে ইজতেমা শেষ হওয়ায় এ দিন মধ্যরাত থেকেই জোরেশোরে অভিযান শুরু করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ, কানসাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, শেরপুর, বগুড়া, গাইবান্দা, রাজশাহী, বরিশাল ও চটগ্রামসহ দেশের যে ২৭টি জেলায় গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে ওই জেলাগুলোতে অভিযান পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। ওইসব এলাকায় অভিযান চলাকালে রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ভাড়াটে পিকেটাররা যাতে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় পালাতে না পারে এজন্য ২৪ ঘণ্টা সড়ক, নৌ ও রেলপথে বিশেষ পাহারা বসানো হবে। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ অভিযানের তদারকি করবে। এরই মধ্যে সন্দেহভাজন নাশকতাকারী, তাদের অর্থের জোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের তালিকা যৌথবাহিনীর হাতে পেঁৗছে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ‘অবরোধের নামে নাশকতা ও মানুষ হত্যাকারীদের ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা এসব মামলার আসামি তাদের গ্রেপ্তারেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে।
অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যৌথবাহিনী এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় চিরুনি অভিযানের মহড়া দিয়েছে। তাতে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে। এ সাফল্যের বিষয়টি গুরুত্বে নিয়েই এবার একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
রোববার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া চিরুনি অভিযানে বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি গ্রেপ্তারের প্রস্তুতি নিয়ে এরই মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ জেলা শহরের বিভিন্ন কারাগার থেকে বিপুলসংখ্যক আসামি অপেক্ষাকৃত কম আসামি থাকা জেলখানাতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, নাশকতাকারী, ইন্ধনদাতা এবং তাদের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা যৌথবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে তার সিংহভাগই বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রশিবির, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং শ্রমিক দলের জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মী। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে পুরনো নাশকতার একাধিক মামলা। ওই তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও প্রথমসারির বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে বলে গোয়েন্দা ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেন।
এদিকে আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত জনবহুল ঢাকাতে কেউ অন্য এলাকা থেকে পালিয়ে এসে যাতে আত্মগোপন করতে না পারে এজন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্য হোটেলগুলোও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোয় অভিযান ছাড়াও বাড়ানো হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারি।
অপরদিকে ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, এ মুহূর্তে কোনো সংলাপ ও মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকারের নেই। বরং বিরোধী দলের বেপরোয়া তা-ব ও নাশকতা ঠেকাতে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। গ্রিন সিগন্যাল পেলেই যে কোনো মুহূর্তে নেতাকর্মীরা নাশকতাকারীদের প্রতিহত করতে মাঠে নামবে।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে গ্রিন সিগন্যালও দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ধরনের অভিযানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে কোন মুহূর্তে দেশজুড়ে শুরু হবে বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত বলে তিনি জানান।
তার ভাষ্য, কারো ঘরে যখন ডাকাত পড়ে তখন ডাকাত তাড়ানোই গৃহকর্তার প্রধান কাজ এবং এ কাজে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা থাকে। ডাকাতদের সঙ্গে গৃহকর্তা আলাপে বসে না। তেমনি দেশে এখন অবরোধ আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তা ডাকাত দলের ডাকাতির ঘটনার চেয়েও মারাত্মক। আর এ ডাকাতদের দমনে সরকার নিয়োজিত থেকে প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান ডাকাত দল পিছু হটছে না। উল্টো সংলাপের আকুতি জানাচ্ছে। কিন্তু ডাকাত বা সহিংসতায় লিপ্ত দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং এ নাশকতাকারীদের চিরতরে দমন করতে আওয়ামী লীগ যৌথবাহিনীকে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, এখন আর অপেক্ষা করার সময় নেই। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং মানুষের জানমাল রক্ষার্থে অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িতদের যেভাবেই হোক কঠোরহস্তে দমন করা হবে। প্রয়োজনে যৌথবাহিনীর চিরুনি অভিযান সারাদেশে একযোগে চালানোরও সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে মন্তব্য করেন আইজিপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *