সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ যমুনায় অস্বাভাবিক হারেগত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা বৃষ্টিতে পানি বাড়ছে। আর এতে করে যমুনা নদীর অংশে টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ফলে উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা, অর্জুনা ও নিকরাই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। নদীর তীরবর্তী স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গৃহহারা হয়েছে শত শত পরিবার। এছাড়াও তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের পাট, আউশ ধান, তিল, সজ, বাদামসহ কয়েক হাজার একর জমির ফসল।
ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে ভূঞাপুর উপজেলার অর্ধশত গ্রামের মানুষ। সরেজমিনে, গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ী, ভালকুটিয়া ও কষ্টাপাড়া গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুঁমকির মুখে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহতম গোবিন্দাসী গরুর হাট, গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়, ৩’শ বছরের পুরনো কষ্টাপাড়া কালি মন্দির, খানুরবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
গাবসার চরচন্দনী গ্রামের কৃষক রহিজ উদ্দিন জানিয়েছেন, “এক দিকে নদীর পানি বাড়ছে অন্যদিকে বাড়ী ভাঙছে। যা আবাদ করছিলাম সব বানে তলায়া গেছে। বাড়ী ঘর গরু ছাগল লইয়া কনু যামু কি করমু কিছুই দিসা পাইতাছি না।”
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির জানান, “তার ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ভূইয়া পাড়া, ফলদাপাড়া, রামপুর, খন্দকার পাড়া, চন্দনী, নিকলাপাড়া, মেঘারপটল গ্রামে প্রায় ৩শ ১০টি পরিবার নদিগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত ছিন্নমূল পরিবারগুলো অতিকষ্টে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।”
অর্জুনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২৫০টি পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মোল্লা। নিকরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মতিন সরকার জানান, কোনাবাড়ী, বাহাদুর টোকনা ও পলশিয়া গ্রামে ৪৫টি পরিবারের বাড়ীঘর যমুনায় বিলীন হয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. নাসরীন পাভীন জানিয়েছেন, “এ উপজেলায় ভাঙন কবলিত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের জন্য এ পর্যন্ত জন্য কোন ত্রাণ বরাদ্দ পাইনি। তবে এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।”
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, “যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আপাতত জিও ব্যাগ ফেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পানি কমার সাথে সাথে পুনরায় জিও ব্যাগ ফেলা হবে।”