গাজীপুর: আজ ২৬ শে জুন(১৯শে মার্চ ১৯৭১ এর সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী- গাজীপুর সদর তথা জয়দেবপুর ও আশেপাশের অঞ্চলের যুদ্ধকালীন কমান্ডার-রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শহীদুল ইসলাম পাঠান-জিন্নাহ পাঠান) ১৪তম মৃত্যু বার্ষিকী।
এক নজরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শহীদুল ইসলাম পাঠান
নামঃ মোঃ শহীদুল ইসলাম পাঠান, ডাকনামঃ জিন্নাহ পাঠান
পিতার নামঃ মোঃ ওয়াহেদ বক্স পাঠান
জন্মস্থানঃ পূর্ব জয়দেবপুর(বরুদা), গাজীপুর।
উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডঃ
১. ১৯৬২ সনে কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে যেয়ে পুলিসী নির্যাতনের শিকার।
২. ১৯৬৮-৬৯ এর ১১দফা আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে গাজীপুরে (ততকালীন ঢাকা সদর উত্তর মহকুমা) নেতৃত্ব দান।
৩. ১৯৬৯-৭০ সনের জন্য নির্বাচিত ঢাকা সদর উত্তর মহকুমা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন।
৪. ১৯৭০ এর নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন।
৫. ১৯৭১ এর অসহযোগ আন্দোলনের শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় গোপনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা।
৬. ১৯৭১ সনের ১৯শে মার্চে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনে ১১সদস্য বিশিষ্ট “মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ” এর সদস্য হিসেবে নেতৃত্বদান।
৭. মুক্তিযুদ্ধঃ
ক. মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিং সেন্টারের নামঃ লায়লাপুর,আসাম,ভারত।
খ. ট্রেনিং এর মেয়াদঃ সাধারন ২১দিন, লিডারশিপ ২১ দিন।
গ. যুদ্ধকালীন সেক্টর-৩
ঘ. যুদ্ধকালীন র্স্থানীয় কমান্ডারের নামঃ নিজেই ( ৩ নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার হতে কমান্ডশিপ প্রদান করা হয়)।
ঙ. অপারেশন-
* চৌদ্দগ্রাম বর্ডার দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে সিএন্ডবি রোডে অবস্থানরত পাক সেনাদের সাথে গুলি বিনিময়সহ গাজীপুরে পৌছার পথে বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ।
* প্রতিটি অভিযানে সরাসরি নেতৃত্বদান। বিভিন্ন অভিযানে অধীনস্থ সাহসী সহযোদ্ধা-কাজী আলীম উদ্দিন বুদ্দিন, মেজবাহ উদ্দিন,ফজলে এলাহী, মহর আলী, মোঃ শহীদুল্লাহ বাচ্চু, জলিল, ভূলু, শ্রীরাম চন্দ্র দাস, আক্কাস আলী,বদিউজ্জামান খোকন।
চ. স্মরণীয় অপারেশনঃ
* ৫ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জয়দেবপুর স্টেশনে অবস্থানরত পাক সেনাদের উপর আক্রমন ও ১৫জনকে হত্যা এবং প্রায় ২৫জনকে মারাত্বক জখম করে নিরামদে ফিরে যাওয়া।
* নভেম্বরের শেষ দিকে রাজেন্দ্রপুর ডিপো থেকে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ মালগাড়ীতে বোঝাই করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়ার সময় গাজীপুরা রেল স্টেশনের দক্ষিন পার্শ্বে রেল লাইনের নীচে এন্টিট্যাংক মাইন পুতে গাড়ীটি ফেলে দিয়ে ৩০জন পাক সেনা হত্যা করে সমস্ত অস্ত্র এবং গোলাবারুদ হস্তগত করা।
* ১২ই ডিসেম্বর পূর্ণ শক্তি নিয়ে রাজবাড়ী ক্যান্টনমেন্টে সাড়াশি আক্রমন এবং পাক সেনাদের বিপুল ক্ষয় ক্ষতির বিনিময়ে প্রায় ২ ঘন্টা রাজবাড়ী দখল।
(এসকল অপারেশন পরিচালিত হয় মিত্র বাহিনী বা বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোন রকম সাহায্য ছাড়া)
• ১৪ই ডিসেম্বর জয়দেবপুর ক্যান্টনমেন্ট, রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট, টাঙ্গাইল ক্যান্টনমেন্ট হতে পাকসেনারা অস্ত্র এবং গোলাবারুদসহ ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট যাওয়ার পথে চৌরাস্তার দক্ষিনে ছয়দানা নামক স্থানে বাধা প্রদান। সাথে সাথে শুরু হয় কাশিমপুর এবং ইসলামপুরে অবস্থানরত মিত্র বাহিনীর মর্টার ও কামানের আক্রমন। এবং তা ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। পাকসেনাদের ট্যাংকসহ বিপুল পরিমান গোলাবারুদ ভর্তি গাড়ী ধ্বংশ এবং কয়েকজন বাদে প্রায় সকল পাকসেনা হত্যা।
৮. যুদ্ধপরবর্তীঃ
ক. স্বাধীন বাংলাদেশে জয়দেবপুরের প্রথম থানার ইনচার্জ হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বিভিন্ন রাজাকারকে গ্রেফতার।
খ. দেশ পুনর্গঠনে আত্ননিয়োগ।
৯. সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডঃ গাজীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ মঞ্চ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিসেবে নিজের সাংস্কৃতিক প্রতিভা তুলে ধরা।
১০. মৃত্যুঃ ২৬/০৬/২০০৬খ্রিঃ