শিক্ষা ডেস্ক: সময়কাল কোভিড-১৯, স্থবিরতা পুরো বিশ্বকে ধাবিত করছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। চঞ্চলতা নেই জনজীবনে। প্রানহীন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে মাঠ-ঘাট, পথে-প্রান্তরে। লকডাউনের আদলে এ যেন সৌরজগতের এক নতুন পৃথিবী।
কোভিড-১৯ এর এই সময়ে জনজীবনের হতাশার প্রভাব পড়েছে শিক্ষাঙ্গনে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষাবিদ,গবেষকগন তাঁদের মেধা ও মননশীলতার দিয়ে করোনা অবস্থার উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে অনেকাংশে থমকে আছে স্বাভাবিক পাঠদান, বন্ধ রয়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে অনলাইনে গবেষণা, পাঠদানসহ তথ্যের আদান-প্রদান শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। ঘনবসতিপূর্ণ মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহার ও অনলাইন শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। শঙ্কাগ্রস্থ শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আনতে দেশের যেসকল বিভিন্ন শিক্ষাবিদ,গবেষক, শিক্ষকগন পথ প্রদর্শনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁদেরই একজন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন সৌরভ।
অনলাইন সেশনে অধ্যাপক সৌরভ তাঁর চাঞ্চল্যকর, বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনায় প্রত্নতত্ত্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার সুন্দর বিবরণ, ডকুমেন্টারি উপস্থাপন এবং বাংলার হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য ছাত্রছাত্রীদের মাঝে তুলে ধরেছেন।
১৮ই মার্চ লাল পাহাড়ের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেড়েচে শিক্ষার্থীরা।কোভিড -১৯ এর কারণে শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক পাঠদান স্থগিত হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতের অনুমান করতে পেরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা- সংস্কৃতি মানসিক স্বাস্থ্যের সঠিক বিকাশ বজায় রাখতে তিঁনি শুরু করেন অনলাইন পাঠদান ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনের আবিষ্কার ও সংরক্ষণ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা, আবিষ্কৃত নিদর্শন সমূহের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও রক্ষণাবেক্ষণের পদ্ধতি ডকুমেন্টারি আকারে উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যেের জ্ঞান সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন।
নিয়মিত সেশনের পাশাপাশি রয়েছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সময় এবং দক্ষতা ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ ও ব্যাক্তিত্ব সহ বেশ কিছু ভার্চুয়াল ওয়ার্কশপ। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন স্থাপনা,নির্দশন,সংস্কৃতি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে অংশগ্রহনের যে বাস্তব অভিজ্ঞতা এসব কিছুই শিক্ষার্থীদের সাথে ভাগাভাগি হয় এই অনলাইন সেশনে।
সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত সেশন এর বিশেষ দিন ”প্রত্ন জিজ্ঞাসা”।এই কুইজ অনুষ্ঠানের মধ্যে পঠিত ও সুপরিচিত দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থাপনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয় এক মজার আয়োজন। পয়েন্টের যোগ-বিয়োগের এই কুইজ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আর্কষনীয় পুরস্কার পাওয়ার স্বপ্ন বুনে শিক্ষার্থীরা। এই নিয়ে অনলাইন সেশন এর নিয়মিত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিরা জলি বলেন “কুইজ আয়োজন বেশ ভালো লাগে। চমৎকার এ প্ল্যাটফর্ম এর সাথে যুক্ত হয়ে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন ও স্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারছি।”
নিয়মিত সেশনে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে এক নতুন অধ্যায়-“ মিট দ্যা আর্কিওলোজি গ্রাজুয়েটস”। সপ্তাহে দু’বার সাক্ষাৎ মেলে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক শেষে দেশ ও দেশের বাহিরে বিভিন্ন গবেষনা, শিক্ষকতা ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব থাকা সফল ব্যাক্তিবর্গের। এ সেশন নিয়ে প্রত্বতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী খন্দকার নাঈমা আক্তার নুন বলেন, ” তাঁদের সফলতার গল্প বেশ অনুপ্রেরণা জোগায় ভবিষ্যত কিছু করার।”
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে অনলাইন পাঠদান এক নতুন মাধ্যম যা শিক্ষার্থীদের এই করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসে নিরাপদে জ্ঞানার্জন, সুস্থ চিন্তা ও বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনার নতুন এক সম্ভাবনাময় দ্বার খুলে দিয়েছে। অনলাইন পাঠদানের বিষয়ে সৌরভ স্যার বলেন- মহামারীর এই সময়টিতে কেবল ব্যাক্তওগত গবেষণা নয় বরং শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পৃক্ত থাকা কে ব্যাক্তিগত উপলব্দি করছি সে কারনেই অনলাইনের মাধ্যমে গবেষণা নিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পাবলিক সেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দেশ ও দেশের ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও যুগোপযোগী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করছি এর মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা দিকনির্দেশনা খুঁজে পাচ্ছেন।
অনলাইন পাঠদানের এ সেশন এ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও এই সেশনগুলোতে যুক্ত আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারজানা নিলা বলেন-অনলাইন পাঠদানের এ সেশনগুলোতে যুক্ত হতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। সেশন গুলো তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
লেখক
নাজমুননাহার রিমা
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়