করোনা বদলে দিয়েছে সকল নিয়মকানুন। বদলে দিয়েছে পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি। সামাজিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস। অর্থনীতির চাকা তো এক প্রকার থমকে দিয়েছে। সবমিলিয়ে বিপর্যস্ত পৃথিবী, বিপর্যস্ত মানুষ। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্বের সীমা বজায় রাখতে গিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলই এখন প্রেস রিলিজ এবং ভার্চুয়াল আলোচনার মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে। তবে এসবের মধ্যেও থেমে নেই একে অন্যের মধ্যে বাকবিতণ্ডা।
যেখানে বিশ্বের প্রায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো করোনা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা একে অন্যকে দোষারোপে ব্যস্ত। অবশ্য করোনা মোকাবিলায় বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইভাবে সরকারি দল থেকে ঐক্যবদ্ধ কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কীভাবে ঐক্যবদ্ধ কাজ এগিয়ে নেবে সরকারি তরফে এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে না। কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করছে না। ওদিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বানে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সায় পাওয়া যায়নি।
গত ১৭ই জুন বিএনপি সংকটের শুরু থেকে ভুল ধরিয়ে দেয়ার নামে সরকারের অন্ধ সমালোচনা আর নেতিবাচক বক্তব্যের চর্বিত চর্বন করে যাচ্ছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি দেশ ও জাতির পাশে না দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার, গুজব ছড়ানোকেই পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে মেনে নিয়েছে। এ মিথ্যাচার ফ্রন্ট লাইনে কর্মরত যোদ্ধাদের মনোবল নষ্ট করার অপপ্রয়াস। করোনার মতো বৈশ্বিক এ মহামারি মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সরকারের উদ্যোগগুলো বিএনপির চোখে পড়ে না, ধুলোজমা মরচে ধরা চশমা সরিয়ে এ সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এবং সরকারের কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানে আবারো তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক দলগুলোর গত দুই মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিরোধী দলগুলোর মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও ডিজিটাল মাধ্যম বেছে নিয়েছেন। ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির ভার্চুয়াল রাজনৈতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর পরই সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে দলটি। প্রথমে ২৫শে মে পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা ছিল। পরে তা আগামী ২৫শে জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এই সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিএনপির কমিউনিকেশন্স সেল। তবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাতে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এছাড়া কোনো জোটে নেই এমন কয়েকটি দলের নেতারাও চাঙ্গা রয়েছেন ভার্চুয়াল বক্তব্যে। প্রতিদিন নিয়ম করে কোনো-না-কোনো টেলিভিশন বা বিভিন্ন সংগঠনের অনলাইন শোতে বক্তব্য দিচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের চাপের কারণে গণমাধ্যম সত্য প্রচারে শঙ্কিত। এর প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশবাসী লক্ষ্য করেছে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আন্দোলনে সরকারবিরোধী প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল ক্ষেত্রে বিএনপি কীভাবে গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং গুজবভিত্তিক রাজনীতির বৈধতা দিয়েছে। সেই কারণে সংকটময় এই সময়ে জনগণের পাশে না দাঁড়ানো বিএনপির মিডিয়াবাজির রাজনীতিতেও ভাটা পড়ায় তারা গণমাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করে সরকার। এর একদিন পরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করে এই বাজেটে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপি। আর বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়া আগে ভাগে তৈরি করা মনগড়া, গতানুগতিক পুরনো গল্প বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ। করোনা মহামারির এ সময়ে এসেও প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।