তারা এসেছিল অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে। দীর্ঘদিন চাকুরী ও ব্যবসা বাণিজ্য করে আনন্দের সাথে জীবন পরিচালনা করেছিলেন। এক বুক আশা নিয়ে সন্তানদের ভালো স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলেন। কেউ চাকুরী করতেন বড় বড় কোম্পানিত মোটা দাগের স্যালারিতে। আবার কেউ বেসরকারী স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেউবা ছোট খাট কোম্পানি, গার্মেন্টস ও সেলসম্যান হিসেবে। শত শত শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টার ও টিউশনি করে অর্জিত অতিরিক্ত অর্থ গ্রামের বাড়িতে গরীব পিতা মাতার কাছে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন। প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্থানে সূখী জীবন যাপন করতেন। কিন্তু সমগ্র বিশ্ব ব্যাপী মহামারী করোনার করাল গ্রাসে বাংলাদেশের অবস্থানরত বড় বড় শহরের কর্ম জীবিরা চরম অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ধাক্কা খেয়েছে। আমরা বুঝতেই পারছিনা হঠাৎ করে বিশ্ব ব্যাপী এই ভাবে চরম বিপর্যয়ের শিকার হবে। যারা আধুনিক ইমারত ভাড়া করে ধানমন্ডি, গুলশান, বারিধারা ও বসুন্ধরা বনানী ও খুশিতে luxurious জীবন যাপন করতো লকডাউন এর কারনে কোম্পানির অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হওয়াতে ব্যবসা – বাণিজ্য ও চাকুরী বাকুরীত বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই মোটা দাগের বাড়ি ভাড়া প্রদানে ব্যর্থ হওয়াতে তুলনামূলক কম মূল্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আবার কেউবা গ্রামের দিকেই ছুটছে। ছোট খাট ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবিদের অবস্থা খুবই খারাপ। মাসের পর মাস বাড়ি ভাড়া দিতে ব্যর্থ হয়ে বাড়িওয়ালার নোটিশে পাত্তারি গুটিয়ে শেকড়ের ঠিকানায় চলে যাচ্ছে ।ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন অহরহ এই ঘটনা ঘটছে। এক সময় যারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে বছর শেষে ফরেইন অবকাশ যাপন করতো, যারা সন্তানের বার্থ ডে পালনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতো, যারা বন্ধু – বান্ধবীর ম্যারেজ ডে-বার্থ ডে পালন করার জন্য হোটেল স্যুট ভাড়া করে উন্নত মানের খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে লক্ষ টাকা খরচ করে আনন্দ উপভোগ করতো আজ করোনার কাছে তার অর্থনৈতিক ভাবে চরম বিপর্যস্ত। মধ্যবিত্ত চাকুরী ও ব্যবসায়ীদের অবস্থা একই। আর গার্মেন্টস শিল্পের অবস্থা আরও খারাপ। মালিকেরা লসের নামে হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা পেলেও শ্রমিকদের বেতন কর্তনের পরে শুরু হয়েছে ছাঁটাই প্রক্রিয়া।
হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মীর চাকুরীচ্যুতিতে দিশেহারা হয়ে পঙ্গপালের মতো গ্রামের দিকেই ছুটছে। এই অবস্থা একবার দেখেছিলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।সহস্রাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী প্রায় আট বছর চাকুরী করার পর একটি নির্বাহী আদেশে(হাইকোর্ট এর রায়) চাকুরীচ্যুত হয়ে দিশেহারা অবস্থায় অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।তাদের সন্তানরা ভালো ভালো স্কুল কলেজে পড়াশুনা করতো। এসব কোমলমতি সন্তানেরা বাবা মায়ের চাকুরীচ্যুতিতে বন্ধুদের কাছ থেকে অশ্রু সজল নয়নে বিদায় নেয়াটা কতটুকু কষ্টের তা ভূক্তভোগীরাই একমাত্র বুঝতে পারবেন। ফেইসবুক, অন লাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে এখনও তাদের হাহাকার শুনতে পাই। তেমনি আজকে করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত স্বপ্নচারী অনেক চাকুরী জীবি, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল – কলেজের মালিক – কর্মী, গার্মেন্টস শ্রমিক চাকুরী ও পুঁজি হারিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে স্বপ্নের ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের সমস্ত ভালবাসা ও মায়া ত্যাগ করে নীরবে চোখ মুছতে মুছতে কোনোমতে বেঁচে থাকার আশায় অনেকটা বাধ্য হয়ে গ্রামের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ও ট্রাকে যখন তাদের মালামাল উঠিয়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করা প্রিয় শহর ছেড়ে গন্তব্যের দিকে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে তখন তাদের হৃদয়ে কতটুকু রক্তক্ষরণ হয় তা তাদের চাহনি দেখলেই বুঝা যায়।
মোস্তাক আহমদ
তাংঃ—২১শে জুন ২০২০
https://www.facebook.com/mostak.ahmad.311?__tn__=%2CdlC-R-R&eid=ARDrHnIB3tqTyNp8fwz36CnP4jikUyZ9Xghg4gK-bBIjpycs2091O3IEw3DSsGnHLt7Ecvxbn3Fyx1SB&hc_ref=ARTdbsJ4AATtmEuAwDh_92dYzJUiJVjT91m6pb_vNvqq0Lywhc_f_KVd9SphyKvlC-U