দ্রুত করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এলাকা ভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের পরামর্শ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপনের পর তা কার্যকর করতে সম্মতি দেয়া হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে অনেকটা লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর বিরুদ্ধে শুরু থেকে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ ছিল। এবার এই লকডাউন বাস্তবায়ন নিয়ে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। করোনা মোকাবিলায় দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে বিশ্বের অন্যন্য দেশ এগোলেও দেশে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ বাস্তবায়নেও এমন ধীরগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এখন পর্যন্ত কোথায় কবে লকডাউন হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে সপ্তাহ খানেক আগেই দেশের করোনার রেড, ইয়োলো এবং গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকার তথ্য প্রকাশ করা হয় সরকারি ওয়েব সাইটে।
রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকা লকডাউন হবে এমনটা বলা হয়েছিল শুরুতে। তবে কোথায় কোন এলাকা কবে থেকে লকডাউন হবে তার কোন নির্দেশনা আসেনি এ পর্যন্ত। পরীক্ষামূলকভাবে দেশের কিছু এলাকায় এখন লকডাউন চলছে। এর মধ্যে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করা হয়েছে। ৫০ হাজার বাসিন্দার এ এলাকায় শুরুতে ৩১ জন করোনা আক্রান্ত ছিল। এখন সেখানে আরো ২৯ জন রোগী যোগ হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান দাবি করেছেন কঠোর লকডাউনের কারণে করোনা রোগী খুব বেশি বাড়েনি। আক্রান্তদের অন্তত ২০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সরকারের তরফে বলা হয়েছিল পরীক্ষামূলকভাবে লকডাউন করা এলাকার পরিস্থিতি দেখে পরবতী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা মহানগরীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা লকডাউন হচ্ছে বলে প্রচার করা হলেও পরে জানানো হয়, এ এলাকা লকডাউন করার কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
সূত্র জানায়, জোনভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্ব হওয়ার পেছনে রয়েছে সমন্বয়হীনতা। স্বাস্থ্য বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাজকর্মে সমন্বয়হীতার কারণেই জোনভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। লকডাউন নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে সুনির্দিষ্ট জোনিং ম্যাপ চেয়েছেন ঢাকার দুই সিটি মেয়র।
১৫ই মে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন- এই তিন জোনে ভাগ করে কার্যক্রম গ্রহণ করার পরামর্শ দেয় জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি। এরপর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর পর তিনিও এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের সম্মতি দেন। পরে গত ১লা জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করে কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন। এর ১০ দিন পর ১১ই জুন এই কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ১৩ই জুন রাজধানীর ৪৫টি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রেড জোন এবং মাঝারি ঝুঁঁকিপূর্ণ ইয়েলো জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে। কিন্তু ওই দিন বিকালে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধু রেড জোনে ছুটি থাকার কথা জানানো হয়। ওইদিন রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, রাজধানী ও মহানগরে সিটি মেয়র লকডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। তাদের সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর জেলা শহরে সিভিল সার্জন জোন নির্ধারণ করে দেবেন। মঙ্গলবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, যখন যেখানে প্রয়োজন তখনই সেখানে রেড জোন ঘোষণা করা হবে।
এদিকে লকডাউন নিয়ে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কোন কোন এলাকায় আগাম মাইকিং করায় অনেকে বাসায় থাকার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন।