আল্লামা আহমদ শফীর পর মহাপরিচালক কে হবে এটি নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটি।
বুধবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় মজলিসে শূরার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে বলে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গত মে মাসে থেকেই দেশে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন আন্দোলনের উৎসভূমি হয়ে ওঠা হাটহাজারী মাদ্রাসার শীর্ষ পদে আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে তৎপরতায় প্রকাশ্যে এসেছে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব।
দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ শতবর্ষী প্রবীণ আলেম আল্লামা আহমদ শফী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে কারো নাম ঘোষণা করতে পারেন এমন গুঞ্জন শোনা গেছে মাঝে-মধ্যে। এরমধ্যে হেফাজত মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর পক্ষের লোকজন সোশ্যাল মিডিয়া সরব রেখেছে।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কথা আসতে শুরু করলে ওই মাসে অসুস্থ আহমদ শফী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, কাউকে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বা সহকারী পরিচালক পদ তিনি দেননি। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের কওমি মাদ্রাসা, ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের ব্যাপক কৌতূহল রয়েছে। অনুষ্ঠিতব্য মজলিসে শূরার বৈঠক থেকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে কারো নাম ঘোষণা আসতে পারে এমনটা মনে করছেন অনেকে।
জানা গেছে, এবারের বৈঠকটি ২০১৭ সালের পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই বৈঠক নিয়ে কেউ সরাসরি বক্তব্য না দিলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, হেফাজত আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বার্ধক্যজনিত অসুস্থতাসহ নানা রোগে ভুগছেন। তিনি চান নিয়মতান্ত্রিকভাবে শূরার সিদ্ধান্তক্রমে পরবর্তী মহাপরিচালক নির্বাচন করা হোক।
তবে কার কাঁধে এই গুরুদায়িত্ব পড়বে সেটা জানতে মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
সূত্র আরও জানায়, যিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক হবেন পদাধিকারবলে তিনি অন্তত দুই শতাধিক মাদ্রাসার মুরব্বি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নেতৃত্ব পেতে পারেন হেফাজতে ইসলামের মতো দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠনেরও।
সে হিসেবে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব হিসেবে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম আসছে বারবার। আবার অনেকের মুখে আল্লামা বাবুনগরী ছাড়াও মহাপরিচালক পদে হাটহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস প্রবীণ আলেম মাওলানা শেখ আহমদ ও সাবেক মুহতামিম মাওলানা আব্দুল ওয়াহাবের ছেলে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আহমদ দীদার কাসেমীসহ আরও দুয়েকজনের নামও শোনা যাচ্ছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বহিরাগতদের মধ্যে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে হাটহাজারী ওলামা পরিষদ।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও হেফাজত নেতা মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী বলেছেন, আমরা মজলিসে শূরা যা সিদ্ধান্ত দেয় তা মেনে নেব। তবে তা হতে হবে মজলিসে শূরার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত।
জানা গেছে, হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা সদস্যের কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছে। এরমধ্যে একজন শয্যাশায়ী হওয়ায় তার উপস্থিতি অনিশ্চিত হলেও অন্যান্য সদস্যদের উপস্থিতি অনেকটা নিশ্চিত বলা যায়।
মজলিসে শূরার উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন- ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসা পরিচালক ও হাইয়াতুল উলয়া কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা নায়েবে মুহতামিম ও বেফাক যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি নুরুল আমিন, ঢাকার খিলগাঁও মাখজানুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ মেখল মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা নোমান ফয়জী, ফটিকছড়ির জামিয়া উবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী ও হাটহাজারীর ফতেপুর মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেপুরী।
এ দিকে শূরা বৈঠক তথা মাদ্রাসার শীর্ষ পদে শাহ আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে তৎপরতায় প্রকাশ্যে আসা দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এমন শংকায় হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ব্যাপারে হাটাহাজরী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ আলম কে জানান, মাদ্রাসার এ শূরা বৈঠক তথা মহাপরিচালকের পদ নিয়ে যাতে কোনো পক্ষ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা বেশ তৎপর আছি।
প্রসঙ্গত, উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা। প্রায় ১২০ বছর ধরে দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত হয়ে আসা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দেশের মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে এটি সর্বপ্রাচীন ও বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা।
বর্তমানে এ মাদ্রাসার মহাপরিচালকের (মুহতামিম) দায়িত্ব পালন করছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। যিনি কওমি মাদ্রাসার সমন্বিত বোর্ড আল হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ (হাইয়াতুল উলয়া) ও কওমী মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ারও (বেফাক) সভাপতি।
এ ছাড়া মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালকের (নায়েবে মুহতামিম) দায়িত্ব পালন করছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।