ঈশানকোলে কাল মেঘ: বাংলাদেশ অসুস্থ

Slider জাতীয় সম্পাদকীয়

44739_f1

৩০লাখ শহীদের রক্ত ও সাড়ে ৭লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ৯মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছে সেই রাষ্ট্র এখন অসুস্থ। আমাদের লাল সবুজের পতাকার ব্যাসার্ধে কাল রংয়ের মরিচিকা দেখা দিয়েছে। রক্ত লাল পাতাকার কোনে কাল মেঘের আভা আমাদের অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে। জাতীয় নেতৃবৃন্ধের বোধোদয় না হলে মেঘ থেকে বৃষ্টি বা ঝড় এমনটি টর্নেডোও হতে পারে। বিপন্ন হতে পারে আমাদের স্বাধীনীতা ও সাবভৌমত্ব।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পযালোচনায় দেখা যায়, আমরা দিন দিন কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি। নীতি ও নৈতিকতা অভিমান করে আমাদের যেন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। দূরে অনেক দূরে। জাতীয় নেতৃবৃন্ধের মিথ্যাচার আমাদের বিপদের অশনি সংকেত দিচ্ছে।

১৯৯৬ সালে বেগম জিয়া একদলীয় নিবচান করে ১৫দিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছেন। শেখ হাসিনা ওই নিবাচনে না আসায় খালেদা জিয়ার নিবাচন জনগন মেনে নেয়নি। ২০০৬ সালে বেগম জিয়া জোরপূবক ক্ষমতায় থাকার জন্য নিবাচনের প্রস্তুতি নেয়। শেখ হাসিনা প্রতিবাদ করায় বেগম জিয়া পরাজিত হয়। কিন্তু দুই নেত্রীর ঝগড়া বিবাদের ফয়সালা করে বেসরকারী সামরিক সরকার। ওই সরকার বন্দি করে দুই নেত্রীকে। ভেবেছিলাম বন্দি দশা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা মনে হয় পথ চলবেন। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়ে বালি।

২০১৪ সালের ৫জানুয়ারী খালেদাকে ছাড়া হাসিনা নিবাচন করে সরকার গঠন করেন। ওই নিবাচনের আগেই আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের মত আসন নিশ্চিত করেন। সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫১ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসন নিবাচনের আগেই নিশ্চিত করে আওয়ামীলীগ।

হাসিনা ছাড়া খালেদা আর খালেদা ছাড়া হাসিনা টিকতে পারেন না ওই কথাটি বতমানে মিথ্যায় পরিণত। কারণ খলেদা ছাড়া হাসিনা চলছে। চলবে। আর খালেদা ছাড়া হাসিনা চলতে পারবেন না চলতে দেয়া যাবে না ওই লক্ষ্যে কাজ করছেন বেগম জিয়া। ফলে চলছে সংঘষ। আগুন ভাংচূর। মানুষ মারার কাজ।

৯০এর পর বাংলাদেশের চলমান গনতন্ত্রে বিরোধী দলের উপর এত অত্যাচার আমরা দেখিনি। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন ৭৮তম মামলায় কারাগারে। সাবেক প্রধামন্ত্রী নিজ কাযালয়ে অবরুদ্ধ আছেন। ইটা আর বালি দিয়ে সরকার বেগম জিয়ার কাযালয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে তালা খুলে আর লাগানোর রাজনৈতিক ব্যবসা করছেন।। বেগম জিয়াকে অবরুদ্ধ রেখে খোঁদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া অবরুদ্ধের নাটক করছেন। মন্ত্রী বলছেন, ইটা বালি দিয়ে বেগম জিয়া বাড়ির কাজ করবেন।

আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতার মুখ থেকে প্রতিদিনি যে সব কথা বের হচ্ছে তা সত্য না মিথ্যা না বিশোধগার জাতির কাছে তা পরিস্কার। তবু তারা বলছেন বলে যাচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে সব কথ বলছেন ওই গুলো নিঃসন্দেহে ঘৃনার যোগ্য। কল্পনাপ্রসূত কথা শুনলে মনে কষ্ট লাগে। জাতি হিসেবে লজ্জা পাই। তারেক রহমানের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি প্রতিবাদ ও ঘৃনার।

অপরপক্ষে বলা উচিত হবে যে, তারেক রহমান কোন পরিস্থিতিতে মিথ্যা কথা বলে জয়ী হতে চাচ্ছেন। যখন তারেক রহমানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে পাক বাহিনীর লোক বলে গাল মন্দ করা হয়, তারেককে কু-পুত্র বলা হয়, জারজ বলা হয়, তারেকের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় তখন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন তারেক রহমান আবোল তাবোল বলে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন।

এদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে জামায়াতের সঙ্গে জোটে থাকা বিএনপি নীরবতা পালন করছে। সরে আসার ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে ভাল লক্ষন। কিন্তু আওয়ামীলীগ এটিকে রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে সমথন করেছে বিএনপি এমন কথা বলে বিএনপিকে জামায়াতের ঘাড়ে চাপাতে সহযোগিতা করছে। এতে জামায়াত-বিএনপি জোট আরো সংঘঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

দুই পক্ষের আক্রমনাত্বক কথা বাতা থেকে মনে হয় রাজনীতির কাজ শুধু গালি গালাজ করা। পরস্পরের সম্মান নিয়ে খেলা ধূলা করা। বিএনপির ও আওয়ামীলীগের কিছু নেতার মুখের ভাষা নিয়ন্ত্রন করতে না পারার কারণে বাংলাদেশের বতমান অবস্থা এখন নাজুক হয়ে গেছে। তাদের সতক থাকা উচিত বলে মনে হয়।

পযালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত একতরফা তথাকথিত নিবাচনের পর বিরোধী জোট হঠাৎ করে আন্দোলন থেকে সরে আসে। এক বছর তারা তেমন কোন আন্দোলন করেনি। এই এক বছরে আওয়ামীলীগের কথিত কিছু নেতা মন্ত্রীর পতাকা বহন করে যার পর নাই মন্তব্য করে বিএনপিকে মারমুখি করে তোলেন। বিএনপিকে আন্দোলনে নামতে পরোক্ষাভাবে প্ররোচনা দিতে থাকেন। সব শেষ বেগম জিয়াকে অবরুদ্ধ করার পর শুরু হয় পিঠ ঠেকানো আন্দোলন। চলে জ্বালাও পোঁড়াও। প্রতিদিন আগুনে পুঁড়ছে মানুষ।

গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য চলছে মানুষ খুনের উৎসব। ২০ দলীয় জোট বলছে মানুষ খুনের জন্য সরকার দায়ী। সরকার বলছে ২০ দলীয় জোট দায়ী। এই টানাপোড়েনের মধ্যে প্রতিদিন ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। রেহাই মিলল না মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধমীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমায়ও।

মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে মানুষটিকেই মেরে ফেলা কোন অধিকার প্রতিষ্ঠা বা কোন গনতন্ত্র! তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ কখন যে রাস্তায় নেমে পড়বে তা মানুষও জানবে না।

পরিশেষে বলা যায়, ঘরে বাইরে এমনকি অতিথিদের সঙ্গেও বৈষম্যমূলক আচরণ করে কেউ শান্তিতে থাকতে পেরেছেন এমনটি দেখা যায়নি। ফল খেয়ে গাছ কেটে ও গাছের মূল উপড়ে তুলে জায়গাটি পযন্ত বিক্রি করে দিলে যেমন ফল পাওয়া যাবে না তেমনি গাছ ও জায়গার মালিকানাও থাকবে না। কোন দিন দাবিও করা যাবে না।

 

তাং ১৯/০১/২০১৫

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *