বিল্লাল হোসেন নিজেস্ব প্রতিবেদক: যিনি মানুষ গড়ার কারিগর, তাঁর মৃত্যুতে পরিবার, নিকটতম আত্তীয়স্বজন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সমাধি করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। তখন এলাকার মুসলমান যুবসমাজ এগিয়ে এসে তাঁর সমাধি সম্পন্ন করেন। কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ কিরণ গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে পরলোকগমন করেন। সে মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের অধিবাসী। বৃহস্পতিবার বিকেলে মৈশাইর এলাকায় তাঁকে সমাধি দেয়া হয়।
জানা যায়, করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা গেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে তার পরিবারের লোকজন, নিকটতম আত্তীয়স্বজন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো লোক সমাধি সম্পন্ন করার জন্য এগিয়ে আসেনি। কোনো মানুষ মারা গেলে তার সম্প্রদায়ের লোকজন ধর্মীয় রীতিতে ওই লাশের দাফন বা সৎকার করে থাকেন।
করোনা সন্দেহে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাঁধার মুখে পড়ে তাঁর পরিবার পরিজন এমন কি হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ এগিয়ে আসেনি। তখন কালীগঞ্জ উপজেলার যুবলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক কবির হোসেন পালোয়ানের নেতৃত্বে মৈশাইর গ্রামের কিছু সংখ্যক মুসলিম যুবকদের উদ্যোগে একজন মানুষ গড়ার কারিগর প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ কিরণের সমাধি সম্পন্ন করা হয়।
সচেনতমহলের প্রশ্ন, ধর্মীয় রীতি মেনে মাষ্টার হরিলাল দেবনাথের সৎকার করতে হিন্দু সম্প্রদায় তথা তার সমাজবাসী এগিয়ে আসার কথা। কিন্তু তিনি করোনা বা কলেরার মতো মহামারীতে মারা যাননি। তবে কেন এই মানুষ গড়ার কারিগরকে তার সমাজবাসী সমাধি সম্পন্ন করে ওনার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়া হয়নি?
এই করুণ দঃুসময়ে এলাকার মুসলিম ধর্মের লোকজন এসে প্রধান শিক্ষকের সৎকার সম্পন্ন করে মহতি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে তাদের এই মানবতা। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়ে রেখে গেছেন।
শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার যুবলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক কবির হোসেন পালোয়ানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ কিরণ ভালো মানুষ ছিলেন। দায়িত্ব ও মানবতা থেকে তিনির সমাধি সম্পন্ন করেছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মো. ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, কেউ বলছে তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাই তার করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।