গাজীপুর: গাজীপুর শহরের অভিজাত এলকা উত্তর ও দক্ষিন ছায়াবীথীর মাঝ খানে মধ্যছায়াবীথীতে অবস্থিত ভাওয়াল রাজার “সিদ্দির মার পুকুর” নামে একটি ঐতিহ্যবাহী পুকুর। গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের দক্ষিন সীমানায় রাস্তার পাশে এই পুকুর। পুকুরের পানিতে ময়লা আবর্জনার সঙ্গে প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে বাসা বাড়ির ময়লা। সব মিলে রাস্তার পাশে সিদ্দির মার পুকুর পাড় যেন ময়লার ভাগাড়। পুকুরের চার পাড়ের মধ্যে তিন পাড়ে বসতবাড়ি গড়ে উঠায় এক পাড় রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা। এই খালি জায়গায় যত ময়লার স্তুপ।
সন্ধ্যার পর এই রাস্তা দিয়ে মেয়েরা নিরাপদে চলাচলও করতে পারেন না। কারণ পুকুর পাড় অন্ধকার থাকায় বখাটেরা এই এলাকায় অবস্থান করে। ফলে পুকুর পাড় এলাকায় বসবাসরত মেয়েরা অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, পুকুর পাড় একটু একটু করে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে আয়তন অনেক কমে গেছে। পুকুরের তিন পাড়ে অনেকটা সাবেক জমে থাকা পানির উপরেই গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। আবার বাড়িও পুকুরের মাঝ দিয়ে তৈরী হয়েছে দু পায়ী রাস্তাও। এই পুকুর পাড়ে প্রায় ২০টি পরিবার বসবাস করেন। পুকুরের ময়লা পানি আর পাড়ের আবর্জনার দুর্গন্ধ পরিবেশকে অস্বাস্থ্যকর করলেও বসবাসরতরা অভ্যস্থ্য হয়ে যাওয়ায় তাদের কোন অসুবিধা হয়না। পুকুর পাড়ে ছোট ছোট শিশুদেরও দেখা যায় ময়লার স্তুপে বসে খেলা করতে।
পুকুরের আংশিক পূর্ব ও উত্তর অংশ রাস্তার পাড় হলেও ময়লা আবর্জনার স্তুপ পড়ে থাকে সব সময়। পুকুর পাড়ের মাটিও আস্তে আস্তে পুকুরে পড়ে গিয়ে পুকুরকে ভরাট করছে প্রতিনিয়ত।
স্থানীয়রা বলছেন, তিন বছরের জন্য মাছ চাষের কথা বলে বিভিন্ন প্রভাবশালী লোক এই পুুকর লিজ নেয়। নামে মাত্র মাছ চাষ করে সময় পার করা হয়। আর কৌশলে পুকুর পাড় ভরাট করে নতুন নতুন বাড়ি তৈরী করার কারণেই আজ পুকুরের আয়তন কমে গেছে। যদি যথাযথ সংরক্ষণ করে পুকুরটি উদ্ধার করা না হয়, তবে খুব তাড়াতাড়ি ভাওয়াল রাজার এই পুকুরটি বিলিন হয়ে যাবে।
পুকুরের উত্তর পাড়ে রাস্তার উত্তর পাশে ক্রয়সূত্রে জামি কিনে বাড়ি করেছেন ব্যবসায়ী মোঃ মাফিকুর রহমান সেলিম। পুকুরটি ভরাট হয়ে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করে সেলিম বলেন, সরকার নজর দিলে বিলিন হবে না। তবে পরিত্যক্ত প্রায় এই ঐতিহাসিক পুকুরটি সংস্কারও করা হয় না। এই বিষয়ে সরকার বা কেউ কোন খোঁজও নেয় না। সন্ধ্যার পর পুকুর পাড়ের অন্ধকার জায়গাটি স্পর্শকাতরও বটে। তাই তিনি রাস্তা সংলগ্ন পুকুরের পাড় নিজ উদ্যোগে সংস্কার করছেন। কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে তিনি নিজেও পুকুর পাড় সংরক্ষনের জন্য পুকুর পাড়ে মাটি ভরাট করে পাড় শক্ত করছেন। বাঁশ কাঠ দিয়ে শক্ত প্রচীর তৈরী করে তিনি পুকুর পাড়টি সুন্দর ও মনোরম করছেন। রাস্তার পাশে পুকুর পাড় শক্ত করে বেঁধে তিনি ফুল ও ফলের গাছ লাগাবেন। একই সাথে তৈরী করবেন পুকুর পাড়ে একটি সুন্দর পরিবেশ। ভদ্র মানুষ যেন এই পুকুর পাড়ে ইট পাথর থেকে বেরিয়ে একটু হলেও নিঃশ্বাস নিতে পারেন, সেই এক টুকরো সুযোগ তৈরীর চেষ্টা ব্যবসায়ী সেলিমের।
ভাওয়াল রাজার ইতিহাস ও ঐতিহৃকে সংরক্ষন করার একটি অংশ হল সিদ্দির মার পুকুর সংস্কার করা। অবহেলা আর অসতর্কতার কারণে কোন ঐতিহাসিক সরকারি সম্পদ যেন নষ্ট হয়ে না যায়, সেই জন্য তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে এই কাজটি করছেন। কিছু দিন আগে তিনি স্প্রে মেশিন কিনে স্থানীয় য়ুবকদের দিয়ে পুকুর পাড়ের সকল বাসা বাড়িতে মশা নিধনের ব্যবস্থাও করেছেন। করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটেও তিনি সাধ্যমত সহযোগিতা করছেন।
সেলিম বলেন, দেশ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকেই তিনি এই মহতি কাজটি করছেন। প্রতিটি মানুষ যদি তার বাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ফল ফুলের গাছ লাগাতো তবে সার্বিকভাবে পরিবেশ হয়ে উঠত বাসযোগ্য। আমরা সকলেই পেয়ে যেতাম একটি সুন্দর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এতে বিভিন্ন থরণের মহামারী থেকেও বাঁচতে পারতাম আমরা।