ঢাকা: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারদের প্রস্তাবে রাজী না হয়ে শতকোটি টাকার ফাইল আটকে রাখার কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেনকে। নিহতের স্ত্রী খাদিজা আক্তার এমনটিই অভিযোগ করেছেন গোয়েন্দাদের কাছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেলোয়ার ছিলেন এক জন সৎ অফিসার। গাজীপুর সিটি করপোরেশন থেকে প্রায় ছয় মাস (সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি) ওএসডি করে রাখা হয়। এরপর তাকে বদলি করা হয় কোনাবাড়ী অঞ্চলে।
সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চল অফিস সূত্র জানায়, এই অঞ্চলের ঠিকাদারদের কাজের পাওনা শতকোটি টাকার একাধিক ফাইল আটকা রয়েছে। এসব ফাইল তদন্ত করে ঠিকাদারি কাজে গাফিলতি পেয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। ফাইলগুলো প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের টেবিলে আটকা পড়ে আছে। ঠিকাদারদের একটি চক্র ফাইল ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য তার কাছে বেশ কয়েকবার তদবির করেন। ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু দেলোয়ার কোনো অবস্থাতেই ঘুষ নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। এসব বিষয় নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন দেলোয়ার। এ নিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ারের সঙ্গে ঠিকাদারদের প্রকাশ্যে বিরোধ শুরু হয়। কিন্তু এসব কারণে যে তিনি হত্যার শিকার হতে পারেন তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি ঐ সূত্র।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঘটনার দিন সোমবার সকালে মিরপুরের বাসা থেকে দেলোয়ারকে আনতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন অফিস থেকে নিয়মিত পাঠানো গাড়ি তার বাসায় যায়নি। সিটি করপোরেশনের অন্য একটি গাড়ি পাঠানো হয় তার বাসায়। ঐ গাড়ির চালক একটি দোকান থেকে দেলোয়ারের মোবাইলে ফোন করে বাসার ঠিকানা জানতে চান এবং বলেন, তার গাড়িটি নষ্ট বলে এই গাড়িটি পাঠিয়েছে। সিটি করপোরেশনের ঐ গাড়িতে করে দেলোয়ার গাজীপুরের অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু দেলোয়ার আর অফিসে পৌঁছতে পারেননি। দুপুরের দিকে তুরাগের দিয়াবাড়ীর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে মাথা থ্যাঁতলানো লাশ উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে। গভীর রাতে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে দেলোয়ারের পরিবার লাশ শনাক্ত করে।
ঘটনার বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, এখানে স্পষ্ট, পরিকল্পিতভাবেই প্রকৌশলী দেলোয়ারকে হত্যা করা হয়ছে। প্রাথমিক তদন্তে তারা তিন জনকে শনাক্ত করেছেন। ঐ তিন জনকে গ্রেফতার করতে পারলেই মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে। আশা করি, খুব শিগিগরই আসামিরা গ্রেফতার হবে। তারা গোয়েন্দা নজরদারিতেই আছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী খাদিজা আক্তার।
এদিকে গাজীপুর সিটিকরেপোরেশনের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ঘুনের ঘটনায় চারিদিকে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। খুনের কারণ শুধুই কি অসৎ প্রস্তবে রাজি না হওয়া না অন্য কিছু তা নিয়ে মুখরোচক আলোচনাও আছে। একজন সৎ কর্মকর্তাকে কেন ওএসডি করা হলো আবার কেনইবা তাকে কোনাবাড়ি অঞ্চলে বদলী করা হলো, তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা আছে। আবার ঠিকাদাররা তাদের ফাইল আটকে থাকার কারণ জানিয়ে মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন কি না, করে থাকলে ফাইল ছাড়াতে পারলেন না কেন, এই সবই আলোচন্যর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার শেষ দিন বাসা থেকে আনার জন্য সিটিকরপোরেশনের গাড়ি না গিয়ে অন্য গাড়ি কেন গেলো এবং অপরিচিত চালকই বা কেন গেলো, সবই ধুম্রজালে আটকে আছে। অসৎ প্রস্তাবে রাজি না হওয়া না রাজনৈতিক কোন কারণ ছিল সবই এখন আলোচনা সমালোচনার বিষয়। তবে তদন্ত শেষে আসল রহস্য উদঘাটন হওয়ার পর বলা যাবে একজন সৎ কর্মকর্তা খুনের কারণ। আর তখনই জট খুলবে এই অপহরণ ও হত্যার ঘটনার। এই অপেক্ষায় এখন জাতি।