ঢাকা: করোনায় কাঁপছে মহাবিশ্ব। বাংলাদেশেরও একই অবস্থা। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনার ছোবলে ইতোমধ্যে চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক, রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিক্ষক, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি সহ অনেকেই মারা গেছেন। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে। সর্বশেষ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৬৯১ জন। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৯ জনে।
এই পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের চেয়ে বাংলাদেশ সরকার করোনা মোকাবেলায় সাধ্যের কোন ত্রুটি করছে না। চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরত। কাজ করলে ভুল হয়। আর ভুলের ফাঁকে প্রবেশকরা ভাইরাস খেয়ে ফেলে পুরো অর্জন। বলা যায়, অপ্রবেশকারী ভাইরাস করোনা ভাইরাস থেকে শক্তিশালী। কারণ করোনা রোগী ফেলেও যায় কিন্তু ওই ভাইরাস রোগী নিয়ে যায়। ভালো কাজ গুলোকে মন্দের পেটে ঢুকিয়ে দেয়। এই বাস্তবতায় আমরাও ফেঁসে গেছি বলা যায়। কারণ আমাদের ভালো কাজ থেকে মন্দ কাজের প্রচারণা বেশী এগিয়ে থাকে সব সময়। ফলে বর্তমানে জরুরী সেবা হিসেবে ত্রান বিতরণ আর চিকিৎসা নিয়ে চলছে তুঘলুকি কান্ড। এই দুটি সেবাই এখন অসহায় ও নিরুপায় মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে মূখ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু ত্রাণ লুটও হচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারাও যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, অসুস্থ হলেও হাসপাতালে যেতে নেই কারণ হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। অথচ যারা সুস্থ হচ্ছেন তারা হাসপাতালে বা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে থেকেই সুস্থ হচ্ছেন। তবে ব্যতিক্রম হল, কোন হাসপাতাল গ্রহন না করায় মানুষ বিনাচিকিৎসায় মারাও যাচ্ছেন। করোনা সন্দেহে ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে ষ্ট্রোক করে বাবাও মারা গেছেন। হাসপাতাল গ্রহন না করায় এই ছেলে ও আরেক অতিরিক্ত সচিব সহ একাধিক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের।
এসব তথ্যের মধ্যে ভালো কাজগুলো প্রচার হচ্ছে কম আর মন্দ কাজগুলো প্রচার হচ্ছে বেশী। আমরা এখনো দেখি না, কারোনা রোগীর আপডেটে সুস্থদের বাদ দিয়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বলতে। এই বিয়োগটা আমরা এখনো করছি না। আর সরকার ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর খবর তেমনভাবে প্রচারও হচ্ছে না। অবশ্য অসহায়দের ছবি দিয়ে প্রচারের প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু ছবি না দিয়ে প্রচারের নজীর কম। এতে অসহায়দের অসম্মান করে সহযোগিতা করা হয়ে যায়। আর এটাই হচ্ছে বেশী।
সম্প্রতি আলোচনা হচ্ছে, সরকার প্রায় সব সেক্টরে প্রণোদনা দিচ্ছেন। চৌকিদার থেকে শীর্ষ আমলা পর্যন্ত বিশেষ বরাদ্দ পাচ্ছেন। করোনায় আক্রান্ত হউক না হউক প্রণেদনা পাবেন তারা। আর করোনা আক্রান্ত হলে কত, মরে গেলে কত, তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকেরা কি প্রণোদনা পাবেন তা জানা হয়নি। করোনা যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা সাংবাদিকেরা কি কি সুবিধা পাচ্ছেন তা জানা হয়নি জাতির।
অনুসন্ধানে জানা যায়, করোনার ছোবলে অনেক পত্রিকার ছাপা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক অনলাইন মিডিয়া বন্ধ। আবার চলছে সাংবাদিকদের চাকুরীচ্যুতি ও ছাঁটাইও। ফলে সাংবাদিকেরাও অসহায় হয়ে যাচ্ছেন এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে মফস্বলের সাংবাদিকেরা সবচেয়ে বেশী বেকায়দায়। তারা কাউকে বলতে পারছেন না, চাইতেও পারছেন না। সুতরাং বিপদ মাথায় নিয়ে অপেক্ষা শুধু আলোর ঝিলিক কখন আসবে। তবে এই আলো কোন আলো, সেটা তারা হয়ত জানেন না। মৃত্যুর খাঁটিয়া না ফুলের পাঁপড়ি ছিটানো করোনা জয়ীর সংবর্ধনা, না বেঁচে থাকার অবলম্বন। তথ্য রয়েছে, অনেক মফস্বলের সাংবাদিক দরখাস্ত করে দুস্থদের কাতারে গিয়ে ত্রানের প্যাকেট নিচ্ছেন। মন্ত্রী এমপিদের নিকট থেকেও তারা চাল ডাল আলু তেল নিচ্ছেন। মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন ভাতা কি ভাবে দেয়া হয়, তা কর্তৃপক্ষই জানেন। এটা বলে লজ্জা দেয়ার দরকার নেই। কারণ এই সময় বড়ই অসহায়। অক্ষম সময়কে অসম্মান করা ঠিক হবে না।
এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকেরাও অমানবিক জীবন যাপন করছেন। ২/১ হাজার টাকার মাসিক বেতনের চাকুরীও এখন নেই। করোনার ভয়ে বন্ধ হয়ে গেছে বে-আইনীভাবে পেটের ভাত জোগানোর সেই প্রাইভেটও। কারণ মানুষের বাসায় এখন যাওয়া যায় না। পড়ানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেঁচে থাকা। আর সেই কারণে বাসায় বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর কাজটিও বন্ধ কিন্ডাগার্টেন স্কুলের হতভাগা শিক্ষিত মানুষদের। তারা এখন খেয়ে না খেয়ে আহারে অনাহারে জীবন যাপন করছেন।
এই বান্তবতায় বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে মফস্বলের সাংবাদিক ও শিক্ষকেরা কি ভাবে জীপন যাপন করছেন তার খোঁজ কেউ নেয় না। তবে কিছু জায়গায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই দুই পেশার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিজেদের সাধ্যমত। তবে সেই সাধ্য অবশ্যই অসহায় ও দুস্থদের কাতারে রেখেই। কারণ তারা তো আর সরকারি প্রণোদনা দেয়ার ক্ষমতা রাাখেন না।
এই তথ্যের অসুন্ধান করে জানা গেলো, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বেকার শিক্ষকেরা পেটের দায়ে স্কুল প্রাঙ্গনে করছেন সবজির চাষ। এমনি একটি স্কুলের নাম গাজীপুর মহানগরের ২৮ নং ওয়ার্ডের এম এ বারী ক্যাডেট একাডেমী এন্ড হাই স্কুল। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান ইসমাইল হোসেন জানালেন, বেকার শিক্ষকদের নিয়ে তিনি স্কুল মাঠেই সবজির চাষ করছেন। এই সবজি দিয়ে শিক্ষকদের খাবার জোগারের চেষ্টাই তার এই উদ্যোগ।