বেশিক্ষণ মাস্ক পরলে শরীরে ঢুকতে পারে বিষাক্ত গ্যাস

Slider জাতীয় সারাদেশ


হামিম উল কবির: এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ ফেস মাস্ক (মুখোশ) ব্যবহারে শরীরে প্রবেশ করতে পারে কার্বন-ডাই অক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস। তাছাড়া দীর্ঘ সময় ব্যবহারে এই মাস্কই হতে পারে জীবাণু সংক্রমণের আধার। দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারে মাস্ক আর্দ্র হয়ে গেলে সেখানে অন্যান্য কিছু জীবাণু জন্ম নিয়ে তা শ্বাস নেয়ার সময় ভেতরে চলে যায়। এতে ব্যবহারকারী নতুন সংক্রমণের শিকার হতে পারেন। এ ছাড়া দুর্গন্ধও হতে পারে। সেজন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিক্ষণ মাস্ক না পরে বিরতি নিয়ে সতেজ বায়ু গ্রহণ করে আবার ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া একই মাস্ক বারবার পরা উচিত নয়। কোনো উপায়ন্তর না থাকলে সাবান-পানি দিয়ে উত্তম রূপে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল কালাম আজাদ তিন স্তরের কাপড়ের মাস্ক তৈরি করে ধুয়ে ব্যবহার করতে বলেন। বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, থুতু, সর্দি থেকে আসা কণা (ড্রপলেট) থেকে রক্ষা পেতেই মাস্ক (মুখোশ) ব্যবহার অপরিহার্য। মুখে মাস্ক থাকলে ড্রপলেট সরাসরি নাকে-মুখে প্রবেশ করতে পারে না। এতে মানুষ ভাইরাস থেকে রক্ষা পায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা মহামারীর এ সময়ে বাইরে গেলে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। আবার এই মাস্কই মানুষের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। বেশিক্ষণ মাস্ক ব্যবহার করলে ব্যবহারকারী হাইপোক্সিয়ায় (টিস্যুতে অক্সিজেনের অভাব) ভুগতে পারেন।

তিনি জানান, অনেকক্ষণ মাস্ক ব্যবহার করলে মানুষ স্বাভাবিক বায়ু নাক দিয়ে টেনে নিতে পারে না। শ্বাসটাও মাস্কের ভেতর দিয়ে নিতে হয়, আবার মাস্কের একই স্থানে নিঃশ্বাস ছাড়তে হয়। ফলে এক সময় কার্বন-ডাই অক্সাইড মাস্কের মধ্যে জমা হতে থাকে। কারণ কার্বন-ডাই অক্সাইড অপেক্ষাকৃত ভারী গ্যাস। এটি সরাতে না পারলে শ্বাসের সাথে মাস্ক ব্যবহারকারী শরীরে কার্বন-ডাই অক্সাইড নিয়ে নেয় অক্সিজেনের সাথে। দেহের ভেতর বেশি পরিমাণে কার্বন-ডাই অক্সাইড গেলে মাথা ঘোরাতে পারে, মাস্ক ব্যবহারকারী হতবিহ্বল অবস্থায় পড়তে পারেন। অনেক সময় বোধশূন্যও হয়ে যেতে পারেন কিংবা অবসাদগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা গেলে শরীরের মধ্যে গ্লুকোজ ভেঙে যেতে পারে এবং বেড়ে যেতে পারে বিপজ্জনক ল্যাকটিক অ্যাসিডের। মাস্ক পরা অবস্থায় গাড়ি চালালে পরিমাণ মতো অক্সিজেনের অভাবে ড্রাইভার সাময়িক অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মাস্ক ব্যবহারের কিছু নিয়মাবলী রয়েছে। যখন ব্যবহারকারীকে কারো খুব কাছাকাছি গিয়ে অবস্থান করতে হয় অথবা কেউ খুব কাছে চলে আসার আশঙ্কা থাকলে মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। স্বাস্থ্যসম্মত মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম হলো প্রতি ১০ মিনিট পর এটি খুলে ফেলা এবং সতেজ বায়ুতে শ্বাস নেয়া। তবে এটি কারো কাছাকাছি থেকে করা উচিত নয়। কিছুটা সরে গিয়ে মাস্কটি খুলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে আবার প্রয়োজনে অন্যদের কাছাকাছি যাওয়া যাবে। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার করতে গিয়ে অন্য কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাওয়া উচিত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *