সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার চানতারা গ্রামের ওয়াহেদ আলী আক্ষেপ করে জানালেন,”ধারদেনা কইরা তিন বিঘা জমিতে ধান বুনছিলাম, ভাটার গ্যাসে ধান পুইড়া আমার সব শেষ অইয়া গেছে”। আর তার মতো অনেক কৃষকের স্বপ্ন পুড়েছে ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে। বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ে গেছে এই এলাকার ১০০ বিঘা জমির বোরো ধান। বিষাক্ত এ গ্যাসের প্রভাব পড়েছে এলাকার সব ধরনের গাছের ওপরও। আর তাই এলাকার শতাধিক কৃষক স্বাক্ষর করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় চানতারা গ্রামে গড়ে উঠেছে ৯টি ইটভাটা । আর সবগুলোই দুই বা তিন ফসলি জমির ওপর। বিষাক্ত গ্যাসে যে ধানগুলো পুড়ে গেছে, তার পাশেই ‘নূপুর ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটা। এদিকে গত শনিবার সকালে ইট পোড়ানোর কাজে সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা ওই ইট ভাটায় জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর এতে গ্যাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার বাতাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছিল। এমনকি ওই বাতাসে ধানসহ অন্যান্য গাছের পাতা পুড়ে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন,”তাদের প্রায় ১০০ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে এবং বিষয়টি তারা ভাটামালিকদের জানালে তারা কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।”
কৃষক জয়নাল আবেদিন বলেছেন,”ব্রি-২৯ জাতের ওই ধান কিছুদিন পরই কাটা যেত। একদিকে ধান তো পুড়েছেই, তার সঙ্গে অন্যান্য গাছের কাঁচা পাতাও ঝরে পড়ছে। আর এ নিয়ে এলাকায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটা শ্রমিক জানিয়েছেন,”কয়লা দিয়ে ইট পোড়ালে কিলিনে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। ফলে সব ইট পোড়ানো যখন শেষ হয়, তখন ওই গ্যাস তিন-চার দিন পর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে হয়। এতে মনে হচ্ছে ভাটা মালিকরা একসঙ্গে সব গ্যাস ছেড়ে দিয়েছেন।এজন্যই ফসলের ক্ষতি হয়েছে।”
নূপুর ব্রিক্সের মালিক জানিয়েছেন,”দু-একজন মালিক ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি থাকলেও বেশিরভাগই এর পক্ষে নন।”
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানিয়েছেন, “ইট ভাটার গ্যাসে ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছি। আর বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলব।”
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম লেবু জানিয়েছেন,”কৃষকের শেষ সম্বল এই ধান। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এমনিতেই তারা অসহায়। আর তাই আমি আশা করি, মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবে।”
আর এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেছেন, “অভিযোগ তদন্ত করা হবে। আর অভিযোগ সত্য হলে অবশ্যই কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”