ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে দেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলের মধ্যে ৬৩ জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলাতে এখনো করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়নি। দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা সিটিতে ৫৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ অর্থাৎ তিন হাজার ৭৫১ জন। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জে ৯২৩ জন।
শুক্রবার (১ মে) সকালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে আসে।
আইইডিসিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৬৩ জেলার মধ্যে সবচেয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, কুমিল্লা জেলা। এর পরেও চট্টগ্রাম, যশোর, জামালপুর, গোপালগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলাসহ বেশ কিছু জেলাতে সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়ানোর ঝুঁকি আছে।
আইইডিসিআরের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে মৃত্যুর সংখ্যা হয়েছে ১৬৮ জনের। বয়স বিভাজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৬০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে শতকরা ৪২ শতাংশ ব্যক্তির। তারপর ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৭ শতাংশ ব্যক্তির। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে ১০ বছরের নিচে শিশুদের দুই শতাংশ। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৭৩ শতাংশ, নারী ২৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুসারে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৯ দিনে
মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৬৭ জন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়স বিভাজন করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে শতকরা ২৬ শতাংশ। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে শতকরা ২৪ শতাংশ। ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে শতকরা ১৮ শতাংশ। ৫১ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে শতকরা ১৩ শতাংশ। আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম ১০ বছরের নিচের শিশুদের হার শতকরা তিন শতাংশ। ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে আক্রান্তের হার শতকরা আট শতাংশ হলেও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি শতকরা ৪২ শতাংশ। মোট আক্রান্তের মধ্যে পুরুষ ৬৮ শতাংশ, নারী ৩২ শতাংশ।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিভাগে মোট আক্রান্তের ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৯৯২ জন। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৯৯, গাজীপুর ৩৩২, কিশোরগঞ্জ ২০০, মাদারীপুর ৩৮, মানিকগঞ্জ ২১, নারায়ণগঞ্জ ৯২৩, মুন্সিগঞ্জ ১১০, নরসিংদী ১৪৫, রাজবাড়ী ১৭, ফরিদপুর ১২, টাঙ্গাইল ২৮, শরীয়তপুর ৩০ ও গোপালগঞ্জে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মোট আক্রান্তের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ অর্থাৎ ২৯৬ জন। এদের মধ্যে চট্টগ্রামে ৭৪, কক্সবাজার ২৩, কুমিল্লা ৯৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪০, খাগড়াছড়ি ১, লক্ষ্মীপুর ৩৫, বান্দরবান ৪, নোয়াখালী ৬, ফেনী ৬ এবং চাঁদপুরে ১৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ১২, সুনামগঞ্জ ২৮, হবিগঞ্জ ৫৩ এবং সিলেটে ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রংপুর বিভাগের রংপুরে ৩১, গাইবান্ধা ২১, নীলফামারী ১৩, লালমনিরহাট ৩, কুড়িগ্রাম ৭, দিনাজপুর ২০, পঞ্চগড় ৮ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
খুলনা বিভাগের খুলনায় ১১, যশোর ৬৩, বাগেরহাট ২, নড়াইল ১৩, মাগুরা ৭, মেহেরপুর ২, সাতক্ষীরা ১, ঝিনাইদহ ১৯, কুষ্টিয়া ১৫ এবং চুয়াডাঙ্গায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহে ১৪৩, জামালপুর ৬১, নেত্রকোনা ২৯ এবং শেরপুরে ২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের বরগুনা ৩০, ভোলা ৫, বরিশাল ৪০, পটুয়াখালী ২৭, পিরোজপুর ৯ এবং ঝালকাঠিতে ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট ২৮, পাবনা ৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২, বগুড়া ১৮, নাটোর ৮, নওগাঁ ১৫, সিরাজগঞ্জ ৩ এবং রাজশাহীতে ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা ভাইরাসে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা হয়েছে ১৬৮ জনের। আর নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫৬৪ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৬৬৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১৬০ জন।
এদিকে রাঙামাটি এখনও করোনা মুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ। দেশের ৬৩টি জেলায় যখন করোনার মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে ঠিক তখনও এই ভাইরাসের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাসিন্দারা। যদিও অপর দু’পার্বত্য জেলায় মিলেছে করোনার রোগের অস্তিত্ব। তাই অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেমেছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী ও জেলা প্রশাসন। মানুষকে ঘরে রাখতে চলছে আপ্রাণ যুদ্ধ।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, মহামারী করোনা রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে রাঙামাটির স্থানীয় প্রশাসন। গেলো দেড় মাস ধরে মানুষকে ঘরে রাখতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। রাঙামাটি একটি পাহাড়ি অঞ্চল। এ জেলায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করা খুবই কঠিন। দূর্গম এলাকাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। কিন্তু সেখানেও পায়ে হেঁটে সেনা সদস্য ও জেলা প্রশাসনের সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। রাঙামাটিকে করোনা মুক্ত রাখতে বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। একই সাথে মানুষ যাতে ঘরে থাকে তার জন্য নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষ যাতে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে তার জন্য বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
অন্যদিকে করেনাভাইরাস ঠেকাতে রাঙামাটির লকডাউন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে সেনাবাহিনীও। নিজেদের রেশনের একটি বিরাট অংশ তারা পাহাড়ি অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের মধ্যে বিতরণ করে যাচ্ছে। একই সাথে উদর উপজেলা, পৌরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এছাড়া এলাকায় এলাকায় জীবাণুনাশক পানিও ছিটানো হচ্ছে। আর একান্ত প্রয়োজনে যেসব মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে তাদের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পড়া নিশ্চিত করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, মানুষ যদি আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরে ঘরে অবস্থান করে তাহালে রাঙামাটিকে অবশ্যই করোনাভাইরাস মুক্ত রাখা সম্ভব হবে।