গাজীপুর: কলকারখানা চালুর হওয়ার খবরে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্ধ হয়ে থাকা গ্রামীন হাট বাজার খুলে যাচ্ছে। সরব হয়ে গেছে চায়ের স্টল। লকডাউনের সময় দুই জেলার সীমানা নদীর ব্রীজে তৈরী হওয়া লকডাউন ব্যারিকেডও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
অনুসন্ধান বলছে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর গ্রামবাংলানিউজে এই ব্রীজের বাঁশের তৈরী ব্যারিকেড সহ সচিত্র একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলার সীমানা নদী খিরু নদীর পারুলদিয়া বাজার-হয়দেবপুর সংযোগ সড়কের খিরু নদীর ব্রিজে নির্মিত হয়েছিল ব্যারিকেড। যাতায়াত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ময়মনসিংহ জেলার ভালকা উপজেলার পারুলদিয়া বাজার থেকে আলাদা হয়ে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার হয়দেবপুর গ্রামবাসী আলাদা বাজার গড়ে তোলেন। দুই জেলার সীমান্তবর্তি এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্যৃ পারুলদিয়া বাজার পর্যন্ত ভেঙে ফেলে মরনঘাতি করোনা ভাইরাস। পারুল দিয়া ভেঙে দুই বাজার হয়ে যায় দুই জেলায়। স্থবির হয়ে যায় দুই জেলাবাসাীর মধ্যে সামাজিক সাংস্কৃতিক এমনকি পারিবারিক বন্ধনও। দুই জেলার মানুষের মধ্যে আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। একই অবস্থা তৈরী হয় গাজীপুর-ময়মনসিংহ সীমানার ঝালপাজা বাজার পয়েন্টেও। দুই জেলাবাসীর মিলনস্থল ভালুকা উপজেলার ঝালপাজা বাজারও ভেঙ্গে ফেলে করোনা ভাইরাস। ঝালপাজা বাজারে তৈরী হয় টিনের তৈরী সীমানা প্রাচীর। প্রাচারীরের দুই পাশে দুই বাজার বসতে শুরু করে। একটি ভালুকা উপজেলার ঝালপাজা বাজার। অপর পাশে গাজীপুর জেলার জাহাঙ্গীরপুর বাজার।
(২০ এপ্রিল এই সংক্রান্তে প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিংক http://grambanglanews24.com/181835/?fbclid=IwAR1HVddetx1PUkx5qDc9UfPE6MbgqhNWKugzCMRGP8bvNmDPJCXCu8KUICE)
ওই সময় পুলিশ গিয়ে সীমানা এলাকার সকল হাট বাজার বন্ধ করে দেয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায়, পারুল দিয়া বাজার, ঝালপাজা বাজার, জাহাঙ্গীর পুর বাজার, হয়দেবপুর বাজার, সীমান্ত বাজার, হয়দেবপুর দরগাহ বাজার, বারতোপা বাজার, কাশিমপুর বাজার, বিদাই বাজার, গলদাপাড়া বাজার ও বলদীঘাট বাজার সহ সকল গ্রামীন হাট বাজার। এমমনকি এক গ্রামের মানুষ অন্য গ্রামে বা এক বাড়ির লোকও অন্য বাড়িতে যাতায়াত করত না সহজে।
সম্প্রতি পোষাক কারখানা চালু হওয়ার খবরে আটকে থাকা জনপদ সরব হয়ে উঠে। ভেঙ্গে ফেলে ছোট খাট ব্যারিকেড। পারস্পরিক যোগাযাগ পুনঃস্থাপন শুরু হয়। বসা শুরু করে হাট বাজার ও মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠা দোকানপান খোলা শুরু হয়।
সচেতন মানুষ বলছেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সামাজিক দূরত্ব যদি মানা না হয়, তবে বিপদ ভয়াবহ। এখনি উচিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
সরব হওয়া মানুষগুলো বলছেন, দুই জেলায় লকডাউন চললেও কারখানা খুলে গেছে। গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলার মাষ্টারবাড়ি এলাকায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। তাই শ্রমিকেরা এখন কাজে যাচেছন। ঘরে থাকা মানুষ বাইরে যাওয়ায়, ঘরে থাকারা সবাই যেতে চা বাইরে, এটাই স্বাভাবিক। তাই এখন আর ঘরে বসে থাকার দরকার নেই। বাইরে চলে যাওয়া উচিত এমন যুক্তি দিচ্ছেন তারা।
এই অবস্থায়, স্থানীয় প্রশাসনের উচিত মাঠ পর্যায়ে লকডাউন মনিটরিং করা। না হয় আরো বড় বিপদে পড়তে পারে মানুষ।
প্রসঙ্গত: গাজীপুর জেলায় নতুন করে আরো একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে এই জেলায় মোট রোগীর সংখ্যা ৩৩২ জন। তবে এবার শ্রীপুরে বেড়েছে। অন্য কোন উপজেলায়
বাড়েনি।
সর্বশেষ তথ্যে গাজীপুর জেলা সদরে ১১৪,কালিগঞ্জে ৯১, কাপাসিয়ায় ৭২, কালিয়াকৈরে ৩৪ ও শ্রীপুরে ২১জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।জেলায় ২৬৭৮ টি নমুন পরীক্ষা করে ৩৩১ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ডাক্তার, আইন শঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আছেন।
গাজীপুরে নূতন করে গত ২৪ ঘন্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে সংযুক্ত হয়েছে ৩৩ জন। মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সংখ্যা দাঁড়াল ৪১২২ জন যাদের মধ্যে ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত দিন কোয়ারেন্টাইন শেষে বর্তমানে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন ২৯৬০ জন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে বর্তমানে কোন ব্যক্তি কোয়ারেন্টাইনে নেই এবং নূতন করে কাউকে আইসোলেশনেও রাখা হয়নি। এ নিয়ে গাজীপুরে কোয়ারেন্টাইন এ থাকা ৪১৭১ জনের মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন ৩০০৯ জন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গাজীপুরে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ০২(দুই)জন।
অপর দিকে ময়মনসিংহ জেলার করোনা পরিস্থিতিও করুন। ময়মনসিংহ বিভাগের পিসিআর ল্যাবে করোনায় সর্বমোট ২৬৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সুস্থ্য হয়ে ফিরেছেন ১২ জন। বুধবার জেলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে ২ শিফটে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলা ১৭ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই ডাক্তার, দুই নার্স ও আট জন স্টাফ, সদর উপজেলায় এক ডাক্তারসহ চারজন, নান্দাইলে একজন এবং জামালপুরে সরিষাবাড়িতে একজন রয়েছে।
সবমিলে ময়মনসিংহ বিভাগে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ২৬৯ জন। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১৪৪ জন, জামালপুর জেলায় ৫৯ জন, নেত্রকোনা জেলায় ৩৬ এবং শেরপুর জেলায় ৩০ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগে এ পর্যন্ত ৫৩ জন চিকিৎসকসহ ১৬৯ জন নার্স, স্টাফ ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। এছাড়া এই সময়ে বিভাগে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ১২ জন।