আশুলিয়া (ঢাকা): গতকাল সকাল থেকে আশুলিয়ায় ডিইপিজেডের ৭০টি পোশাক কারখানাসহ সাড়ে তিন শতাধিক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে এসব গার্মেন্ট সরকারি ও বিজিএমইএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে গতকাল হা-মীম গ্রুপের মালিকানাধীন নেক্সট কালেকশন নামে একটি পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক সকালে কারখানাটি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। তা ছাড়া সিগমা ফ্যাশন লিমিটেড এর লে-অফ কৃত কারখানাটি খুলে দেয়ার দাবিতেও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে।
গতকাল সকালে ডিইপিজেডের ৭০টি পোশাক কারখানার কাজ শুরু হয়েছে। এর সাথে আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানের আরো ২৮০টি পোশাক কারখানার উৎপাদন শুরু করেছে।
এদিকে আশুলিয়ার বেরণ এলাকায় হা-মীম গ্রুপের মালিকানাধীন নেক্সট কালেকশন নামে একটি পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক কারখানাটি বন্ধের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছে। এ ব্যাপারে শ্রমিকরা জানান, হা-মীম গ্রুপের প্রধান শাখাসহ এর অধীন অন্যান্য পোশাক কারখানা খোলেনি। তাই তারাও কারখানাটিতে কাজ করতে রাজি নয়। গতকাল সকালে কাজে যোগ দিয়ে শ্রমিকরা উৎপাদনে অংশ না নিয়ে কারখানা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করে রাস্তায় অবস্থান নেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভে বাধা দিলে তারা রাস্তায় বসে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকরা সড়কের অবস্থান থেকে সরে পড়ে। এতে বেশ কিছু শ্রমিক আহত হয়েছে বলেও শ্রমিকরা জানিয়েছে।
ওদিকে আশুলিয়ার ধনাইদ এলাকার লে-অফ কৃত সিগমা ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ আট শতাধিক শ্রমিক কারখানাটি অবিলম্বে খুলে দেয়ার দাবিতে গেটের সামনে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় শ্রমিকরা জানায়, তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করে কারখানাটি হঠাৎ লে-অফ ঘোষণা করে মালিক কর্তৃপক্ষ । এতে শ্রমিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজ হারিয়ে তারা বেকার হয়ে পড়েছে। প্রতিটি পরিবারের মাঝে দুর্ভিক্ষ দেখা দিচ্ছে। শ্রমিকরা এ বছর ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে লে-অফ কৃত কারখানাটি খুলে দেয়ার দাবি জানায় তারা।
এদিকে ডিইপিজেডের ৭০টি পোশাক কারখানাসহ আশুলিয়ায় খুলে দেয়া পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা উৎপাদনে অংশ নিতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করলেও এখনো করোনাভাইরাসের অনিশ্চয়তা আতঙ্ক কাটেনি। দীর্ঘদিন বন্ধ উপভোগ করার পর কারখানাগুলোতে উপস্থিতির হার ছিল অনেক কম। তা ছাড়া বিশ্বব্যাপী ঘাতকব্যাধি করোনা আতঙ্ক তাদের ভাবনায় রেখেছে। কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ঘাটতির কথা তারা জানায়। যেখানে শ্রমিকদের কাজ করার মুহূর্তে পিপি পরে কাজ করার কথা সেখানে গতকাল এই ব্যবস্থা ছিল না। তথাপি প্রয়োজনের চাহিদায় তারা কাজে যোগদান করেছেন বলেও জানায়।
কারখানা সূত্র বলেছে, কারখানাগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং পূর্ণ নিরাপত্তায় ও সচেতনাতার মাধ্যমে তারা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে চায়। অন্যথায় সামনে ঈদ উদযাপনে কঠিন এক সমস্যায় পড়তে হবে তাদের। ইতোমধ্যেই অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছে। এরপরও যদি তারা কাজ না করেন তাহলে কারখানাগুলো দেউলিয়া ঘোষণা করতে হবে। এমন পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য শ্রমিকদের বাস্তব অবস্থার কারণে সকলের সম্মিলিত সচেতনতায় কারখানা খুলতে তারা বাধ্য হয়েছেন।
অন্যদিকে কারখানা খোলার সাথে সাথে আশুলিয়ায় সকাল থেকে স্থানীয় বাস, লেগুনা, মিনিবাসসহ কিছু পরিবহন চলাচল করেছে। কারখানাগুলো তাদের নিজস্ব গাড়িতে শ্রমিকদের তাদের সুবিধামতো স্থান থেকে কর্মস্থলে আনা নেয়া করেছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় পরিবহনগুলো চলাচল করেছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি বা বাধানিষেধ ছিল না।