সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সকল শ্রেণি-পেশা ও সববয়সী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ফলে সরকার ও সমাজের বিত্তবান এবং রাজনৈতিক দলের নেতারাও প্রতিটি কর্মহীন মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। তবে অনেকেই পাচ্ছে আবার অনেকেই পাচ্ছে না। এছাড়াও কেউ নিচ্ছে আবার কেউ সামাজিকতার কারণে নিচ্ছে না। ফলে কর্মহীন মানুষ তাদের খাবার চাহিদা মেটাতে পারছে না।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই ঘরে বসে থাকলেও এক শ্রেণির কর্মহীন মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় আর ঘরে থাকতে পারছে না। এতে বাধ্য হয়ে বেরিয়ে পড়ছেন ঘর থেকে। আর তারা ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও পেটের তাগিদে চাকরি বাঁচাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে ধেয়ে চলেছেন শত শত গার্মেন্টকর্মী। তারা দলবেঁধে পায়ে হেঁটে, কেউ-বা রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও মালবাহী যানবাহনে চেপে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
এরা সবাই ঢাকা, গাজীপুর ও আশুলিয়ার গার্মেন্টস কারখানায় যাচ্ছে। এরা সবাই টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, গাইবান্দাসহ উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে রবিবার রাতে ও সোমবার ভোরে রওনা হয়েছেন।
গার্মেন্টসকারখানা খোলার অনুমতি সরকার দিয়েছে কি দেয়নি তা কোনো গার্মেন্টকর্মীই বলতে পারেননি। এতে শুধু মালিক পক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে চাকরি বাঁচাতে তারা ছুটে চলেছেন বলে জানা গেছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন বন্ধের পাশাপাশি সরকার গার্মেন্টসশিল্পও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে মহাসড়কে ঘরমুখো গার্মেন্টকর্মীদের বিপুল সমাগম ঘটেছে। এতে মালিকপক্ষ পুনরায় গার্মেন্টস খোলার ঘোষণা দিলে রবিবার রাত থেকে আবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে ঢাকার দিকে গার্মেন্টসকর্মীদের স্রোত বইতে শুরু করেছেন। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কারখানার শ্রমিকরা চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেঁটেই ঢাকা ও গাজীপুরের দিকে যাচ্ছেন।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয় আছে কি-না জানতে চাইলে তারা বলেছেন,”করোনার চাইতে ক্ষুধার যন্ত্রণা অনেক বেশি। এতে ঘরে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। ঘরে আটকা থাকলেও খরচ বন্ধ হয়নি। কিন্তু সরকার একবার খাদ্যসামগ্রী দিলে ক’দিন যায়। আর দুই দিনের বেশি যায় না।”
আজকে সোমবার (২৭ ই এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পুষ্টকামুরী বাইপাস এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে,”শত শত গার্মেন্টকর্মী পায়ে হেঁটে ঢাকার দিকে ধেয়ে চলেছেন। তারা সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন,”যতই কষ্ট আমাদের, মালিকদের কোনো কষ্ট নাই। কিন্তু করোনার ভয় আছে। তবে চাকরি বাঁচাতে তাদের যেতেই হবে।”
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মালেক জানিয়েছেন, “গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা চাকরি রক্ষার উদ্দেশ্যে ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। আর এক্ষেত্রে তাদের সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলতে হবে। তবে তাদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হবে।”