পুলিশের কাছে টাকার ভল্টটাই দিয়ে দিল ছোট্ট আয়ান!

Slider জাতীয় টপ নিউজ


শফিকুল দম্পতির আদরের ছেলে আকিদুল ইসলাম আয়ান। বয়স আট বছর। রাজধানীর প্রিমিয়ার স্কুল ঢাকার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির পুরো দেশ। এতে আরো কষ্টে আছে রাজধানীতে থাকা খেটে খাওয়া মানুষগুলো। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরের কারণে যেসব মানুষের কষ্টের কথা জেনেছে আয়ান।

মানুষের এমন কষ্ট ছুঁয়ে গেছে ছোট্ট আয়ানের মন। এমন দুর্দিনে আয়ানের মা-বাবাও সাধ্যমতো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে আয়ান তার বাবাকে বলে, ‘বাবা, আমি আমার ভল্টের জমানো টাকাগুলো অসহায় মানুষদের দিতে চাই। আর এগুলো পুলিশ আঙ্কেলদের মাধ্যমে দিতে চাই। কারণ পুলিশ আঙ্কেলরা মানুষের বাড়ি-বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে।’

ছেলের একথা শুনে শফিকুল সাহেব খুবই খুশি হলেন। কিন্তু আয়ানের ইলেকট্রিক ভল্টটা তার খুবই প্রিয়। গত দুই বছর ধরে ভল্টটি কী পরম মায়ায় আঁকড়ে রেখেছে সে! এটি নিয়ে কত শত পরিকল্পনা তার! যখনই টাকা জমানোর সুযোগ পেত, এনে ভল্টে জমা করতো। ঈদের সালামি। টিফিনের টাকা। আত্মীয় স্বজনের দেওয়া উপহারের টাকা। সব ভল্টে রেখেছে সে। আর টাকা নিয়ে কী কী করবে,তা নিয়ে নিত্য নতুন পরিকল্পনা করে সে। কিন্তু ছেলে আজ সব পরিকল্পনা ছেড়ে দিয়ে তার ছোট্টো জীবনে সকল সঞ্চয় মানুষের কল্যাণে দিতে চায়। এসব ভাবতেই শফিক সাহেবের চোখে অজান্তেই চলে আসে আনন্দ-অশ্রু।

এরপর আয়ানের মায়ের পরামর্শে মিরপুর মডেল থানায় ফোন করেন বাবা শফিকুল। ছেলের ইচ্ছার কথা ওসিকে খুলে বলেন তিনি। সাদরে আমন্ত্রণ জানান ওসি। এরপর মা-বাবার সাথে প্রিয় ইলেকট্রিক ভল্ট নিয়ে থানায় আসে ছোট্ট আয়ান। আয়ান প্রিয় ইলেকট্রিক ভল্ট খুলে পরম মমতায় জমানো সবগুলো টাকা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ছোট্ট আয়ানের ইচ্ছা পূরণে আয়ানের জমানো টাকায় খাবার কিনে ১২টি অভুক্ত পরিবারের কাছে এরই মধ্যেই পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ।

বেঁচে থাকুক বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আয়ানদের এই আস্থা আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা। এই আয়ানদের জন্যই বারবার জিতে যায় মানবতা। এমন আয়ানদের জন্যই পুলিশ ঘরে নিজের সন্তান রেখে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার সাহস পায়। একটু কষ্ট হলেও আয়ানদের জন্য ঘরে থাকি। আসুন,সবাই মিলে একসাথে আয়ানদের জন্য সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে নিরাপদ এক বাংলাদেশ গড়ি।

মিরপুর জোনের ডিসি মোস্তাক আহমেদের ওয়াল থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *