পরাণঘাতী করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় প্রায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। আজ মানবদেহে প্রয়োগ হতে যাচ্ছে বহুল প্রতিক্ষীত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের টিকা।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করা হবে এই টিকা। এটা যদি সফলতা পায় তাহলে অপ্রতিরোধ্য এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার বড় একটি ঢাল পাবে বিশ্ব।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ টিকাবিদ প্রফেসর সারাহ ক্যাথেরিন গিলবার্টের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী করোনাভাইরাসের এই টিকা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তারা এই টিকার ১০ লাখ ডোজ তৈরি করার পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
তার আগে ৩ লিটারের ডোজ তৈরি করেছেন পরীক্ষামূলকভাবে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার জন্য। এই পরীক্ষায় যেসব স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেবেন তারাও প্রস্তুত আছেন। আগামী মে মাসের মধ্যে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৫০০ জনের শরীরে প্রয়োগ করা হবে করোনাভাইরাসের এই টিকা।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তারা সফলতা পেলে ধাপে ধাপে ৫০ লিটার, ১০০ লিটার, ২০০ লিটার এমনকী ২০০০ লিটারের ডোজ তৈরি করবেন। কারণ, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের এই টিকা প্রয়োজন হবে। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন করোনাভাইরাসের টিকার জন্য।
ইতিমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্য ও বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই টিকার ব্যাপারে চুক্তি করে রেখেছে। সফল হলেই তারাও এই টিকা উৎপাদন করা শুরু করবে। চুক্তি রয়েছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কর্মকর্তা আদার পুনাওয়ালা জানিয়েছেন তারা ব্যবসা করার জন্য এই টিকা বাজারে ছাড়বে না। কারণ, এখন ব্যবসা করার সময় নয়।
গতকাল বুধবার ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
অবশ্য এই ধরনের টিকা মানবদেহে কাজ করবে কিনা সেটা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এটার সফলতার ব্যাপারে ৮০ ভাগ আশাবাদী। তাদের আশাবাদী হওয়ার পেছনে অবশ্য কারণ রয়েছে। সেটা হল এই দলে এমন সব বিজ্ঞানী রয়েছেন যারা মার্স ও ইবোলা ভাইরাসের টিকা তৈরি করেছিলেন। দ্রুত টিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে বিস্তর অভিজ্ঞতা।
এখন দেখার বিষয় সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরি করা করোনাভাইরাসের এই টিকার সফল প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষকে স্বস্তির খবর দিতে পারে কিনা। তথ্যসূত্র : বিবিসি, ডেইলি মেইল, দ্য সান ও ইন্ডিয়া টুডে