কলকাতা: পর্যাপ্ত সংখ্যায় টেস্ট না করা, আক্রান্তের সংখ্যায় গোজামিল এবং মৃত্যুর সংখ্যা গোপনের মত অভিযোগ উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে। এমনকি লকডাউন ঠিক মত কার্যকর করা হচ্ছেনা বলে রাজ্য সরকারকে চিঠিতে সতর্কও করেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এর আগে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেশের ১৭০টি হটস্পট জেলার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চারটি জেলার নাম জানিয়েছিল। সেগুলি হল, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগণা। এ ছাড়া, সংক্রমণের খবর এসেছে কিন্তু ‘হটস্পট’ নয়, এমন ২০৭টি জেলার নামও ঘোষণা করা হয়েছে। সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, হুগলি, নদিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিন অবশ্য রাজ্যের সাতটি জেলার পরিস্থিতি ‘গুরুতর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্রের টুইটে।
সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে কলকাতা, হাওড়া-সহ রাজ্যের সাত জেলার করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে জানানো হয়েছে। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র টুইট করে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের করোনা সংক্রমিত এলাকার নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন। টুইটে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি গুরুতর ইন্দোর (মধ্যপ্রদেশ), মুম্বই ও পুণে (মহারাষ্ট্র), জয়পুর (রাজস্থান) এবং কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়িতে (পশ্চিমবঙ্গ)। তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের সংক্রমিত এলাকার সংখ্যাই বেশি। ফলে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্রের টুইটার হ্যান্ডল থেকে করা পর পর দু’টি টুইটে লেখা হয়েছে, লকডাউন বিধি ভাঙার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর থেকে গুরুতর স্বাস্থ্য বিপত্তি ঘটতে পারে এবং কোভিড ১৯ ছড়ানোর ঝুঁকিও রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হিংসার ঘটনা ঘটছে, সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না, শহর এলাকায় যানবাহনও চলাচল করছে। রবিবার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সতর্ক করে এক চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্রীয স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দেশ জুড়ে লকডাউন সংক্রান্ত যে নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যেন কোনও ভাবেই শিথিল না করা হয়। বরং কড়াকড়ি ভাবে সেগুলো প্রয়োগ করুক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৫ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে গাইডলাইন তৈরি করেছে, দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তার বাইরেও নিজের মতো করে কাজকর্ম করছে। এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্ত ৩৩৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৬জন। রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য মতে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৮ জন। কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্যের মিল নেই। যা নিয়ে ক্রমশই শোরগোল তৈরি হয়েছে। কেন অন্য রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের তথ্য ম্যাচ করলেও শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সেটি হচ্ছে না, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞ ও বিরোধীরারাজনৈতিক দলের নেতারা।