বুড়িমারীতে আটকে থাকা ৬১ ট্রাক চালককে ফেরত নেয়নি ভারত

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা


হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ: ভারতের ৬১ জন ট্রাক চালক গত ১৬দিন ধরে আটকে আছেন লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে।যারা গত ৪ এপ্রিল বিশেষ ব্যবস্থায় পাটবীজ নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে এক কিলোমিটারেও কম দূরত্বের বুড়িমারী স্থলবন্দর এসে পণ্য খালাস করে ওইদিনই তাদের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছেন বিষয়টি। ঢাকা জানিয়েছে দিল্লিকে। আর দিল্লি জানিয়েছে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে ওইসব মানুষ এখন অনেকটাই ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

ভারতের বিহার রাজ্যের মতিহার জেলার পশ্চিম চম্পারনের ষাটোর্দ্ধ ট্রাক চালক ইজাহার আলী বলেন, ‘এক কাপড়ে কয়েক ঘন্টার জন্য গাড়ি নিয়ে এদেশে এসেছি কিন্তু এখন আর যেতে পারছি না। এখন মানুষের দেয়া খাবার খাচ্ছি আর ট্রাকের কেবিনেই ঘুম-নামাজ। নামাজ পড়ার জন্য একাধিক কাপড় নেই। নেই জায়নামাজ-টুপি’। এরপরও তিনি বাংলাদেশ ও যারা তার খাবার-আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন বারবার জন্য দোয়া করছেন।

জানা গেছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশে পাঠাতে চ্যাংরাবান্ধায় আনা হয়েছিল পাটবীজগুলো। সেদেশে লকডাউন ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা আমাদানী-রপ্তানি বন্ধ রাখায় সেগুলো ১৬ দিন সেখানেই আটকে ছিল। পরে উভয় দেশের সরকারি নির্দেশে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গত ৪ এপ্রিল পাটবীজ নিয়ে ৬১টি ভারতীয় ট্রাককে এ দেশে পাঠানো হয়। কথা ছিল, বীজ নামিয়ে ওইদিনই তাদের ফেরত পাঠাতে হবে। সেনুযায়ী বাংলাদেশি সিএন্ডএফ এজেন্ট ও স্থলবন্দর কতৃপক্ষ ওইদিনই ট্রাক খালি করে সেগুলো ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা নেই বলে তাতে বাধ সাধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই দিন থেকেই ট্রাকচালকরা আটকে আছেন বুড়িমারীতে।

ট্রাক চালকরা জানান, বুড়িমারীর সিএন্ডএফ এজেন্ট ফারুক হোসেন ঘটনার দিন থেকে চাল, ডাল, মাছ বা সবজী দিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য। আর এগুলো নিজেরাই রান্না করে খাচ্ছেন তারা। তাদের জন্য একটি করে লুঙ্গি, টি-সার্ট, গামছা, সাবান, মাস্কও দিয়েছেন তিনি।

ভারতের আসামের ট্রাকচালক রাজেশ তামাং বলেন, ‘এখনো ভারত থেকে ফিরছেন বাংলাদেশিরা। কিন্তু আমরা ভারতীয় হয়েও নিজের দেশে ফিরতে পারছিনা। এটার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কোনো দোষ নেই। ভারতের সরকারই আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা এখানেই মরে যাবে।’ মুর্শিবাদজেলার লালগোলা এলাকার চালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পাটবীজ নিয়ে পাঠালো কিন্তু আমাদের আর ফিরিয়ে নিচ্ছেনা। আমাদের যদি ফিরিয়ে না নিবে তাহলে তারা(ভারত) কেন এ দেশে পাঠালো?’

ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার মোবাইলে বলেন, ‘আমরা বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও করোনাভাইরাসের কথা বলে ট্রাক ও চালকদের ফিরিয়ে আনছে না ভারত।’

বুড়িমারীর সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স করিম অ্যান্ড সন্সের কর্ণধার ফারুক হোসেন বলেন, ‘পাটবীজ নিয়ে টাকগুলো যেদিন এসেছে সেদিনই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা কিন্তু তাদের সরকার এখন এদিকে নজর দিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ওইদিন মানাবিক কারণে আমি মানুষগুলোর জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।’

বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টম সহকারী কমিশনার (এসি) সোমেন কুমার চাকমা বলেন, ‘বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভারত থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।’

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘ভারতীয় ট্রাকচালকরা আটকে পড়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি। পাশাপাশি ভারতের কোচবিহারের জেলাশাষকের (ডিএম) সাথেও কথা বলেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *