ঢাকা: মরণব্যাধি করোনায় কাঁপছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশেও বসিয়েছে ভয়াল থাবা। কিন্তু মহামারি করোনাকে থোড়াই কেয়ার করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ। দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন চলাকালীন মাওলানা জুবায়ের আনসারীর জানাজায় অংশ নেন ওই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ছিল নির্বিকার। শনিবার সকালে সরাইলে জানাজায় অংশ নিতে মানুষের স্রোত যখন শুরু হয়ে যায় তখন অনেকটা ঘুমেই ছিলেন তারা। সমালোচনার মুখে পড়ে অ্যাকশনে যায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তারা। ততক্ষণে গঙ্গার জল অনেক গড়িয়ে গেছে।
দায়িত্বে অবহেলার কারণে ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে সরাইলের ওসি ও সার্কেল এএসপিকে। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সরাইল আশুগঞ্জের ৮টি গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে। এর মধ্যে সরাইলের ৫টি ও আশুগঞ্জের ৩টি গ্রাম রয়েছে। ১১ই এপ্রিল গোটা জেলাকে লকডাউন ঘোষণার পর নতুন করে এসব গ্রাম লকডাউনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হল জানাজার পর।
আশুগঞ্জ উপজেলার খড়িয়ালা, বৈগইর, মৈশাইর, সরাইল উপজেলার মালিহাতা, পানিশ্বর ইউনিয়নের শান্তিনগর, সীতাহরণ, বড়ইবাড়ি ও বেড়তলা গ্রামের মানুষের প্রতি এসব নির্দেশনার বিষয়ে মাইকিংও করা হয়। গ্রামের কেউ আগামী ১৪ দিন বাড়ি থেকে বের হলেই আইন শৃঙ্খলাবাহিনী কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষনা দিয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সরাইল (সার্কেল) মাসুদ রানা জানান, গ্রামের বাসিন্দাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে ৮ গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে এলাকাগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশের টহল থাকবে। সেই সাথে এই গ্রামের কাউকে গ্রাম থেকে বের হতে দেয়া হবে না। খোলা থাকবে না কোন কোন দোকানপাট।
এদিকে লোকের স্রোত থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় এরইমধ্যে সরাইল থানার ওসি সাহাদত হোসেন টিটু, সরাইল সার্কেলের এএসপি মো: মাসুদ রানা এবং সরাইল থানার ওসি-তদন্ত নূরুল হককে প্রত্যাহার করা হয়। ওদিকে ঘটনার তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত উপ- মহা পরিদর্শক (ডিআইজি) ইকবাল হোসেনকে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আলমগীর হোসেন বলেন- এসব গ্রাম থেকেই প্রচুর লোক এসেছে। এসব গ্রামের লোকজন যাতে পুরোপুরি লকডাউনে থাকে সেই ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা এই নামাজে জানাজায় যোগ দেন। ট্রাক এবং পিকআপে করে স্রোতের মতো আসেন মানুষ।
শুক্রবার প্রখ্যাত এই আলেমের মৃত্যুর পর জেলার বিভিন্ন স্থানে মসজিদের মাইক থেকে তার মৃত্যুর খবর প্রচার করা হয় এবং জানাযার সময় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তা প্রচার করা হয়। আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা
জুবায়ের আহমেদ আনসারীর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসাটি সরাইলের বেড়তলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। এই মাদ্রাসার মাঠে নামাজে জানাযার আয়োজন করা হয়। কিন্তু লোকের ব্যাপকতায় তা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়।
এদিকে ব্যাপক লোক সমাগমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মো.
একরামুল্লাহ বলেন, করোনার সংক্রমণ ঘটে আক্রান্ত লোকের সংস্পর্শে এলে। গণজমায়েত হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শনিবার জানাজার ঘটনায় তাই হয়েছে। এনিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।