গাজীপুর: মহামারি সৃষ্টিকারী করোনা ভাইরাসের আক্রমনে স্তব্ধ বিশ্ব। কাজ হারানো লোকেরা বেঁচে থাকার জন্য এখন দ্বারে দ্বারেও ঘুরতে পারছে না। বাইরে বের হলে অপরাধ। বাইরে গেলে মরার ভয় আর ঘরে থাকলেও একই ভয়। কারণ সরকার তাদেরকে যা দিচ্ছে, তা তারা পাচ্ছে কি না, তা দেখভাল করারও এখন কেউ নেই। কারণ সবাই এখন ব্যস্ত। কেউ দায়িত্ব পালন করছেন আবার কেউ বা আত্মরক্ষার জন্য নানা অজুহাতে দায়িত্ব ফাঁকি দিচ্ছেন। তাই ঘরে-বাইরে সব জায়গায় যাদের বিপদ, তাদের একজন দুলাল মিয়া। বোনের সাথে থাকেন গাজীপুর মহানগরের ভোড়া হাজিবাগ এলাকায় বাবুলদের বাড়িতে ভাড়ায়। । এক সময় প্রতিবন্ধী দুলাল মিয়া ঘরের বাইরে কোন মতে যেতে পারতেন হুইল চেয়ারে করে। মানুষ যাই কিছু দিত, তাই দিয়েই চলত তার সংসার। সংসার বলতে দুলাল মিয়ার কেউ নেই। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে ৩৫ বছরের দুলাল মিয়া বিয়েও করতে পারেননি। তাই থাকেন বোনের সাথে। অভাবী বোন তার প্রতিবন্ধী ভাইকে লালন পালন করতে হিমশিম খায়। তবুও ভাই বলে কথা। তাই বলে ফেলে দিতে পারেন না বোন সাহিদা আক্তার।
কিন্তু এখন আর দুলার মিয়া বাইরে যেতে পারছেন না। সব সময় কপালে হাত দিয়ে ঘরে বসে বা শুয়ে থাকছেন। প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যে কিছু দিলে তিনি খেতে পারেন। না দিলে, না খেয়েই ঘুমাতে হয় তাকে। কারণ কাজে যেতে না পারার কারণে তার বোনও এখন বেকার।
সাহিদা আক্তার গ্রামবাংলানিউজকে জানান, তার ভাই একজন প্রতিবন্ধী। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে যা পায় তাই খায়। না খেয়ে থাকলে তিনি ভাইকে খাওয়ান। কিন্তু না থাকলে ভাই বোন না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। এখন সব কাজ বন্ধ। তাই সাহিদারও আয় রোজগার নেই। এই অবস্থায় তার পরিবার খেয়ে না খেয়ে কোন মতে বেঁচে আছেন। তবে প্রতিবন্ধী ভাই দুলাল মিয়া কোন সরকারি সাহায্য পান না। তার কোন কার্ডও নেই। এখন মহামারিতে যে ত্রাণ বিতরণ চলছে, তা দুলাল মিয়ার পরিবার লোক মুখে শুনেছেন। দেখেননি।
গাজীপুর মহানগরের জিরো পয়েন্ট এলাকার মধ্যে পড়ে এমন জায়গা মহানগরের ২৯নং ওয়ার্ড হাজিবাগ। কিন্তু দুলাল মিয়া শহরের ধানাঢ্য লোকদের আবাসস্থল জিরো পয়েন্টে বসবাস করলেও আহারে অনাহারে বেঁচে আছেন এখন। বড়লোকদের উচ্ছিষ্ট খাবার তো দূরে থাক, লকডাউন হওয়ার কারণে এখন আর গন্ধও পান না।
ত্রাণ মানুষ পায়, তা দুলাল মিয়া প্রতিবেশীদের কাছে শুনেছেন। কিন্তু দেখেন নি। দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। সম্প্রতি দুলাল মিয়া অনেকটা সময় না খেয়ে ছিলেন। কেউ আসেননি। সংবাদ পেয়ে প্রতিবেশী একজন হৃদয়বান ব্যক্তি তার খবর নেন এবং কিছু সহযোগিতা করেন। এই হল দুলাল মিয়ার ত্রাণ পাওয়ার ইতিহাস।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, গাজীপুর ত্রাণ বিতরণের উৎসবে ভাসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই ত্রাণ আর ত্রাণ, চলছে ত্রাণ বিতরণে ছবি দেযা নানা রঙের পোষ্ট। এই সব সুনামী ছবি সমেত পোষ্টগুলো নেতাদের নিজস্ব লোকেরা শেয়ার করে ভাইরাল করে দিচ্ছেন আর দানবীর হয়ে যাচ্ছেন জনপ্রিয় ওই নেতারা। কিন্তু ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য দুলাল মিয়া আর ভাইরাল হতে পারেননি।
গাজীপুর জেলায় একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী, আরো তিন জন সংসদ সদস্য, মেয়র সহ অসংখ্য দানবীর প্রতিদিন ত্রাণ বিতরণ করছেন। দেয়া হচ্ছে সরকারি ত্রাণও। কিন্তু কারো চোখে দুলাল মিয়ার ক্ষধার্থ ও রক্তলাল চোখ একটিবারও আকর্ষন করতে পারেনি। এটা দুলাল মিয়ার দুর্ভাগ্য বলতে হবে। জানা নেই দুলাল মিয়ার, প্রধানমন্ত্রীর ৫কোটি মানুষকে দেয়া খাবারও তিনি পাবেন কি না। ৫কোটি মানুষের মধ্যে তিনি পরবেন কি না, সৃষ্টির্কর্তা জানেন।
গাজীপুরের দুলাল মিয়া বাঁচতে চায়। বাড়ি গাড়ি চাই না তার, পাাঁচতারা হোটেলে যাওয়া ইচ্ছা তো জানাই নেই। উন্নত খাবার দরকার নেই তার। শুধু মোটা চালের একটু ভাত ও আলু ভর্তা হলেই চলে যাবে তার জীবন। এই টুকু চাহিদা দিয়ে তৈরী প্রতিবন্ধী দুলাল মিয়ার বানানো স্বপ্ন পূরণ হবে কি? না, না খেয়েই ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে দুলাল মিয়াদের!