কালীগঞ্জে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয়

মো: সাজ্জাত হোসেন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জে এই সময়ের মহাতঙ্ক করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) ১৭ ই এপ্রিল ২০২০ ইং রোজ শুক্রবার নতুন করে আরো ২ জন আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। অনিবার্য কারণ বসত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত যোগাযোগ করেও এই রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। আজ শনিবার সকালে এ রিপোর্ট পাওয়া যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ছাদেকুর রহমান আকন্দ।

তিনি বলেন, অনিবার্য কারণ বসত গতকাল শুক্রবার গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস হতে কালীগঞ্জ উপজেলার করোনা ভাইরাসের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হতে যে কয়টি নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে, আজকে সকালে এর রিপোর্ট পেয়েছি। আজকে যে ২ টি রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জে যে ২৩ জনের রিপোর্ট করোনা পজেটিভ আসে তারমধ্যে, আমাদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ৫ ডাক্তার, ২ জন নার্স, ২ জন সেকমো, ১ জন ক্যারিয়ার ও ১ জন ওটি বয় রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সহ ১৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তাই কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লকডাউন ঘোষনা করেছে। বর্হিবিভাগ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। জরুরি বিভাগে অল্প পরিসরে চিকিৎসা চলবে। তাছাড়া আমি ব্যক্তিগত ভাবে রোগীরা যেন ঘরে বসে ২৪ ঘন্টা জরুরি চিকিৎসা সেবা পেতে পারে, তার জন্য দুটি হট লাইন নম্বর দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।

কালীগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে গত ১২.০৪.২০২০ ইং রোজ রবিবার হতে ১৭.০৪.২০২০ ইং রোজ শুক্রবার পর্যন্ত মোট ৩৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। তারমধ্যে, ১২ তারিখে ৫ জন, ১৩ তারিখে ৩ জন, ১৪ তারিখে ১ জন, ১৫ তারিখে ৫ জন ও ১৬ তারিখে ২৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।

উল্লেখিত- ১২ তারিখে ৫ জনের মধ্যে- কালীগঞ্জ পৌর মুনসুরপুর গ্রামের ২ জন, উওর ভাদার্তী গ্রামের ১ জন, তুমুলিয়া ইউনিয়নের সোম ইছাপুরা গ্রামের ১ জন ও বক্তারপুর ইউনিয়নের মাঝুখান গ্রামের ১ জন।
১৩ তারিখে ৩ জনের মধ্যে- কালীগঞ্জ পৌর পূর্ব বালীগাঁও গ্রামের দম্পতি ২ জন ও বক্তারপুর ইউনিয়নের ভাটিরা গ্রামের ১ জন।
১৪ তারিখে ১ জন।
১৫ তারিখে ৫ জনের মধ্যে- কালিগঞ্জ পৌর উত্তর ভাদার্তী গ্রামের ৩ জন ও তুমুলিয়া ইউনিয়নের সোম ইছাপুরা গ্রামের ২ জন এবং
১৬ তারিখে ২৩ জনের মধ্যে- কালিগঞ্জ পৌরসভার ১৭ জন, বক্তরপুর ইউনিয়নের ৪ জন ও তুমুলিয়া ইউনিয়নের ২ জন। এখনে কালীগঞ্জ পৌরসভার ১৭ জনের মধ্যে- কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডাক্তার ৫ জন, নার্স ২ জন, সেকমো ২ জন, ক্যারিয়ার ১ জন ও ওটি বয় ১ জন সহ কালীগঞ্জ থানার এসআই রয়েছেন ১ জন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ছাদেকুর রহমান আকন্দ ও কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মিজানুল হক।

কালীগঞ্জ উপজেলার উপজেলা প্রশাসন, কালীগঞ্জ থানা, পৌর মেয়র ও প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার সহ সেনাবাহিনীর টহলরত টিম, প্রতিনিয়ত এলাকার জনগনকে সচেতন করার জন্য সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু এলাকার জনগণ তা ঠিকমতো মানছে না। তাই কালীগঞ্জ উপজেলায় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শিবলী সাদিক বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল শুক্রবার অনিবার্য কারণ বসত করোনা ভাইরাসের রিপোর্ট আসেনি। আজকে সকালে এই রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। যেখানে কালীগঞ্জে নতুন করে আরো ২ জন আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এই দুজন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।

তিনি জানান, মহামারী করোনা ভাইরাসের হাত থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার জনগনকে রক্ষার লক্ষ্যে পূর্বেই উপজেলা প্রশাসন কালীগঞ্জ উপজেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তার সাথে এখন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লকডাউন ঘোষনা করেছে। বর্হিবিভাগ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র জরুরি বিভাগে অল্প পরিসরে চিকিৎসা চলবে।

তিনি আরো বলেন, কালীগঞ্জ পৌর এলাকার সকল জনগন ও ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে, কালীগঞ্জ উপজেলায় ক্রমান্বয়ে করোনা আক্রান্ত রোগী বারতে থাকায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পযর্ন্ত কালীগঞ্জ পৌরসভার কাঁচাবাজার এবং মাছবাজার সহ সমস্ত দোকান-পাট বন্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ঔষধের দোকান খোলা থাকবে। তাছাড়া পৌর এলাকার সকল যানবাহন রিক্সা, ভ্যান, অটো রিক্সা, ইজিবাইক, মাহিন্দ্রা সহ অন্যান্য ছোট বর সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র এম্বুলেন্স, ঔষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এলাকার কোন লোক এক মহল্লা হতে অন্য মহল্লায় গমন করতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি এ নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাহার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য যে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কালীগঞ্জ উপজেলায় ৩৭ জন করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। শুক্রবারের ২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নিয়ে, কালীগঞ্জ উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩৯ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *