সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল এলাকার ডেইরী খামারি মো. আলমের খামারে ৬৫টি গরু রয়েছে। এতে দৈনিক দুধ উৎপাদন হয় প্রায় ৩০০ লিটার। তিনি এক মাস আগেও গড়ে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন এই দুধ পানির দামেও কেউ কিনছে না। এতে দুধ বিক্রি করে তিনি এখন প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাচ্ছেন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অথচ প্রতিদিন খামারে খরচ হচ্ছে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও এই সময়ে বেড়ে গিয়েছে ভূসির ( গো খাদ্য) দাম। পূর্বে যেখানে প্রতি বস্তা ভূসির দাম পড়তো ১ হাজার টাকা সেখানে এখন কিনতে হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। অপরদিকে ডেইরী খামার দেখাশুনার জন্য যে শ্রমিকরা ছিলো তারাও বাড়ি চলে গেছে। তাই খামারে গরুর যত্নের ঘাটতি পড়ছে ব্যাপকভাবে। ফলে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, রোগ বালাই আক্রমণ করছে। অবস্থা এমন যে গরুগুলো ছেড়ে দিতে পারলে বেঁচে যাই। আর কথা বলার সময় একমাত্র ছেলের লেখাপড়া নিয়ে বিড়বিড় করে দুঃচিন্তা প্রকাশ করতে থাকেন তিনি।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল এলাকার ডেইরী খামারি মো. আলম বুক ভরা কষ্ট নিয়ে জানালেন,”চল্লিশ বছর ধরে এই ডেইরী খামারের সাথে আছি। আর খুব ছোট থেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছি আজকের এই কোটি টাকার ডেইরী খামার। এতে অনেক সমস্যায় পড়েছি। ক্ষতি হয়েছে, লাভও হয়েছে কিন্তু কখনো নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করেনি মনে। তবে করোনার কারণে ডেইরী খামারে প্রতিদিন এখন যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে খুব অল্প সময়েই নিঃস্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”
এছাড়াও আরেকজন ডেইরী খামারি মো. আনোয়ার বলেছেন, “১৫ বছর যাবৎ ডেইরী খামারের সাথে জড়িত। তবে কখনো এমন সমস্যায় পড়িনি। আর প্রতিদিন উৎপাদিত ১৫০-১৯০ লিটার দুধ পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছি। দুধ কেনার মতো লোক পাচ্ছি না। এছাড়াও হঠাৎ করে গরম বেড়ে যাওয়ায় অসুস্থ হয়ে আমার ৪টি গরু মারা গেছে যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ডাক্তার আসে না। এছাড়া প্রতিদিন খামারে প্রায় ৫-৭ হাজার টাকা ক্ষতি হচ্ছে আমার, হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে গো-খাদ্যেরও।”
এদিকে উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায় যে, “উপজেলায় তালিকাভুক্ত প্রায় ৫৩ জন ডেইরী খামারি রয়েছেন। প্রতিদিন যেখান থেকে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার লিটার দুধ।আর উৎপাদিত এই দুধ উপজেলার বিভিন্ন হোটেল ও দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত করণ কারখানায় বিক্রি করতো তারা। কিন্তু করোনার কারণে হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় আহরিত এই দুধ পুড়োটাই এখন অবিক্রিত বা বিক্রি হলেও লিটার প্রতি ঘাটতি ২৫-৩০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন খামারিদের নগদ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় লাখ টাকা। তবে প্রতিদিনকার এই ক্ষতি দীর্ঘায়িত হতে থাকলে আশংকা রয়েছে খুব দ্রুতই গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে কোটি কোটি বিনিয়োজিত এই শিল্প।”
ডেইরী ব্যবসায়ী আলম মিয়া, আনোয়ার, সজলসহ অন্যান্য খামারিদের দাবি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের এই ডেইরী শিল্প বাঁচাতে সরকার যদি তাৎক্ষণিকভাবে কোন উদ্যোগ না নেয় তবে খামারিদের পথে বসা ছাড়া আর অন্য কোন উপায় থাকবে না।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুদ্দিন মির্জাপুরের ডেইরী খামারিদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “উপজেলার অধিকাংশ গরুর খামারির সাথে তাদের যোগাযোগ হচ্ছে।আর তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি। বাকিটা সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। শীঘ্রই আশা করছি সরকার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিবেন।”