ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৫ জন; মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৬১— জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি
বিশ্বে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত মহাদেশের তালিকায় শীর্ষে উঠে এলো ইউরোপ। বুধবার রাত পর্যন্ত ইউরোপেই ১০ লাখের সীমা ছুঁয়ে ফেলল আক্রান্তের সংখ্যা। যা গোটা বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক। বুধবার রাত পর্যন্ত পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লক্ষ ৩ হাজার ২৮৪। আর মৃতের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৪৭৫। অন্যদিকে গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ২০ লাখ ৩৫ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার জনের। যদিও এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি সঠিক নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ পর্যাপ্ত টেস্ট কিটের অভাবে অনেক দেশই শুধুমাত্র গুরুতর উপসর্গ থাকা রোগীদেরই পরীক্ষা করছে।
ইউরোপের যে দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ পেরিয়েছে সেগুলি হলো স্পেন (১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪১), ইতালি (১ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৮), ফ্রান্স (১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৩) এবং জার্মানি (১ লাখ ২৭ হাজার ৫৮৪)। এদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ব্রিটেন। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৮৭৩। তবে দিনপ্রতি নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে বর্তমানে সবার উপরে রয়েছে ব্রিটেন। এই পরিস্থিতিতে চাপে পড়ে দেশের নার্সিংহোমগুলোর কয়েক হাজার রোগী এবং চিকিৎসাকর্মীর করোনা পরীক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বরিস জনসনের সরকার। প্রশাসন জানিয়েছে, এবার থেকে নার্সিংহোমগুলিতে কোননো আবাসিক রোগী বা চিকিৎসাকর্মীর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হবে। এরই মধ্যে ভারত থেকে পাঠানো ২৮ লক্ষ প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের প্যাকেট ওষুধের দোকান এবং সুপার মার্কেটগুলিতে সরবরাহ করা শুরু হয়েছে ব্রিটেনে। ওই ট্যাবলেট পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বরিস জনসনের সরকার।
আমেরিকার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। বিশ্বের মধ্যে এদেশেই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে ভাইরাস। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দেশে এখন পর্যন্ত ৬ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছে ২৬ হাজার জন। এদিকে, নিউ ইয়র্কে মৃতের সংখ্যা একলাফে ৬ হাজার ৫৮৯ থেকে বেড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে অথচ কখনোই করোনার পরীক্ষা করা হয়নি এমন ৩৭০০ জনকে এই তালিকায় যোগ করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে শহরের স্বাস্থ্য বিভাগের কমিশনার জানিয়েছেন, আর পাঁচটা সাধারণ বছরের ১১ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল সময়কালের মধ্যে শহরে যত মৃত্যু ঘটে, এবছর তার তুলনায় অন্তত ৩ হাজার জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। এই সমস্ত মৃত্যু সরাসরি করোনার সঙ্গে যুক্ত নাও হতে পারে। কিন্তু এই মৃত্যুগুলোর পিছনে ভাইরাস থাকার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়েও দেয়া যায় না। তবে যেহেতু করোনা পরীক্ষা হয়নি তাই মেয়র বিল দে ব্লাসিও তার সরকারি পরিসংখ্যানে এই মৃত্যুকে ধরেননি। আবার স্বাস্থ্যবিভাগের সন্দেহকে পুরোপুরি খারিজও করেননি। তার মতে, এই পরিসংখ্যান মহামারীকে বুঝতে ও সেইমতো পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। কিন্তু এই মুহূর্তে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মানুষের জীবনটা বাঁচানো।
এদিকে, এক দিন আগেই মৃতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যাও হু হু করে বেড়ে গিয়েছিল স্পেনে। এক ধাক্কায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়ে যায় ১৮ হাজার ৫৭৯। আর আক্রান্ত ১ লক্ষ ৭৭ হাজারেরও বেশি। বুধবার অবশ্য প্রশাসনকে খানিকটা স্বস্তি দিয়ে মৃতের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৫২৩-এ ঠেকেছে। করোনার সংক্রমণে মোট মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি (২১ হাজার ৬৭)। তারপর একে একে ফ্রান্স (১৫ হাজার ৭২৯) এবং জার্মানি (৩ হাজার ২৫৪)। এরইমধ্যে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আগামী ৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে জার্মানি।