গাজীপুর: করোনার থাবায় কেউ মারা গেলে এমনিতেই লাশ দাফনে মানুষ যেতে চায় না। এমন খবরও মিডিয়ায় আসছে, মারা যাওয়া ব্যক্তির স্ত্রী সন্তান লাশ ফেলে চলে যায়, দাফন করে পুলিশ। আবার এমন খবর আছে, পিপিই পড়া লোকগুলো নিস্ক্রিয় থাকার কারণে বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ যায় কবরে।
এই বিষয়টি উদ্বেগের কারণ এই জন্য যে, করোনা ছাড়াও কেউ মারা গেলে মানুষ লাশ দাফন করতে ভয়ে যায় না। এখন মৃৃত্যুর কারণ যাই হউক, লাশ দাফনে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ন মনে করে মানুষ যায় না। কিন্তু এমনি একটি লাশ দাফনে গেলেন জিসিসির মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। রাত ৯টার দিকে যখন তিনি খবর পেলেন লাশ দাফনে কেউ সহযোগিতা করছেন না, তখন তিনি ছুটে গেলেন টঙ্গীতে। গিয়ে লাশ দাফন করলেন।
কোন মানুষ মারা গেলে জীবিত মানুষেরা ধর্মীয় বিধানমতে লাশের সমাধিস্থ বা দাহ করবেন। মুসলমান মারা গেলে কবরস্থ করতে হয় আর হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে শ্মশানে দাহ করতে হয়। কিন্তু করোনার থাবায় দেখা গেলো, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক মারা যাওয়ার পর সবাই পালিয়ে যায় আর লাশ কাঁধে নিয়ে শ্মশানে গেছে মুসলমান। মাথায় টুপি পড়ে হিন্দুর লাশ শ্মশানে নেয়ার নজির মুসলমানদের তৈরী হয়েছে করোনার আক্রমনের মাধ্যমে সৃষ্ট মহামারিতে।
মানুষ জীবিত অবস্থায় আয় উপার্জন করে সংসার চালায়। মা বাবা স্ত্রী সন্তানের জন্য মানুষ কষ্ট করে উপার্জন করে। উপার্জনের মাত্রা কম হলে কষ্ট করে আর বেশী হলে বিলাসী জীবন যাপন করে মানুষ। পরিবার সমাজ বা রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে একটি ভালোবাসার বন্ধন চির অটুট থাকে সব সময়। ভালোবাসা সকলের জন্য একই রকম, হউক সেটা গরীবের বা ধনীর। পিতা মাতার কাছে সন্তান সবচেয়ে প্রিয় হউক সে সন্তান পঙ্গু বা অন্ধ। সন্তানেরর প্রতি বাবা মায়ের ভালোবাসা সব সময়ই বাঁধভাঙ্গা।
আমরা এখনো দেখি, কোন মৃত মানুষের সমাধিতে প্রার্থনা করতে যায় তার আত্মীয় স্বজন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, দাফন করতেই যায় না। জীবিত মানুষেরা ভুলেই যায়, তাদেরও মরতে হবে। মৃত্যুর ভয় মানুষের সবচেয়ে বড় ভয়। কেউ মরতে চায় না। সবাই বাঁচতে চায়। তবুও মরতে হয়। ইচ্ছা করলেই নিয়তির অমতে জীবিত থাকা যায় না। তাই কবি বলে গেলেন, মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবনে। কিন্তু মরতে তো হবেই। এটাই চিরায়ত। তাই মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে না যাওয়া, মৃত ব্যক্তির জীবিত থাকাকালীন সময়ের বাঁধভাঙ্গা ভালোবাসা বিলিন হয়ে যায়। বলতে দ্বিধা নেই যে, যে স্ত্রী বা সন্তানের জন্য আমরা মরিয়া, সেই স্ত্রী সন্তানও কাছে আসতে চায় না, এমনকি সন্তান লাশ ফেলে চলে যায় মৃত্যুর ভয়ে। করোনা আক্রমনে অনেকটা ভালোবাসার পরীক্ষাও চলছে। এটা আমাদের জীবনে অনেক কাজে লাগবে।
এমন পরিস্থিতিতে নিজস্ব লোকজনও যখন লাশ রেখে পালিয়ে যায়, তখন লাশ দাফনে একজন জনপ্রতিনিধি এগিয়ে গেলেন নিজের মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ করে, এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। ধন্যবাদ জিসিসির মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে।