শ্রীপুরে গুজবের কারণে লাশ দাফনে খাটিয়াও পায়নি

Slider গ্রাম বাংলা

গাজীপুর: গত ৯ এপ্রিল সকাল ১০.৩০মিনিটের সময় খোকন নামে এক কাঠ মিস্ত্রি অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়,আর এই মৃত্যুকে করোনা আক্রান্তে মৃত্যু বলে গুজব ছড়িয়ে লাশ দাফনে সহযোগিতা থেকে বিরত রাখে সমাজের সাধারণ মুসল্লীদের, এমন কি খোকনের লাশ রাখার খাটিয়া এবং কবর খোঁড়ার যন্ত্রপাতি পর্যন্ত দেয়নি কথিত সমাজপতিরা।
আর এমন নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড কাইচা বাড়ী গ্রামের একটি সমাজে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায় খোকন পেশায় কাঠ মিস্ত্রি ছিলো, বিগত প্রায় ৪/৫ বছর ধরে সে পেটের পিড়া সহ আরো নানাবিধ অসুস্থতায় আক্রান্ত ছিলো, ঘটনার দুদিন আগে নতুন করে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ৯ এপ্রিল খোকনের স্বজনরা তাকে শ্রীপুর উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়,তখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডিউটি ডাক্তাররা খোকন কে পর্যবেক্ষণ করে দেখে,হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা গেছে বলে ঘোষণা করেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিক্ষা করতে লাশের নমুনা সংগ্রহ করে হাসপাতালের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে, শ্রীপুর মডেল থানা থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে লাশ স্বজনদের মাধ্যমে সরকারি এম্বুল্যান্সে খোকনের বাড়িতে পৌঁছে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

খোকনের স্বজনরা দাবি করেন
এত আনুষ্ঠানিকতার পরও সমাজের নামধারী কিছু মানুষ সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অতিউৎসাহী হয়ে খোকন ও এর আশপাশের পরিবার গুলো কে সামাজিক ভাবে হেয়ো করতে,করোনা আক্রান্ত গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে মানুষিক,সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ফেলেছে তাদের। ঘটনার পর থেকে তারা সামাজিক ভাবে একপ্রকার অবরুদ্ধ হয়ে পরে,দেশের এই ক্রাইসিস সময়ে তাদের সাথে সমাজপতি দের এমন আচরণে তারা আরও বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পরেছে বলে দাবি তাদের।

খাট এবং কবর খোঁড়ার যন্ত্রপাতি না দেয়ার বিষয়ে সমাজের সভাপতি,সম্পাদকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায় নি,তবে অত্র সমাজের কয়েকজনের সাথে কথা বললেও তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেনি,কিন্তু খাট না দেয়ার বিষয়টি অমানবিক বলে মতামত দেন।

এবিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান আরএমও ফাতেহ্ আকরামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, করোনা সন্দেহ করে লাশ দাফনে খাট বা করব খুঁড়তে যন্ত্রপাতি দেয়নি এটা অমানবিক এবং গর্হিত কাজ এমনটা করা মোটেই উচিৎ হয়নি। তিনি আরও বলেন কোন লাশের শরিরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহ অথবা নিশ্চিত ভাইরাস থাকলেও রুগী মারা যাওয়ার পরে সর্বোচ্চ ৩ ঘন্টা জীবাণু সক্রিয় থাকতে পারে,সুতরাং খাট না দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নাই,এগুলো সচেতনতার অভাব বা কুসংস্কার,এগুলো পরিহার করা উচিৎ।

জানা গেছে,মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য পাঠানোর পর আজ রিপোর্ট আসছে করোনা নেগেটিভ।

সমাজের লোকজন দাফন কাফনের ব্যবস্থা না করলেও স্বজনরা নিজেদের মত করে খাটিয়া ছাড়াই ইমামের সহযোগিতায় লাশের গোসল জানাজা এবং কবর দেয়ার কাজ ঐদিনই সম্পূর্ণ করেন।

গ্রামবাসীরা সহযোগিতা না করলেও দূরে দাঁড়িয়ে স্বজনদের দাফন কাফনে কাজ দেখছিল তারা।
মৃত্যু কালে খোকন স্ত্রী এবং তিন মেয়ে এক ছেলে রেখে যান,তেমন সহায়সম্পদ না থাকায় খোকনের পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *