ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কারণে কৃষকদের জন্য দেয়া প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ হার কমিয়েছে বাংলাদশ ব্যাংক। আগে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল কৃষকেরা ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন, আজ তা কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ পাবেন।
আজ বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষকদের চলতি মূলধন দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে পরিচালনার নীতিমালা প্রকাশ করেছে। এতেই কমানো হয়েছে সুদ হার। সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে আজ সুদ হার ১ শতাংশ কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ তহবিল থেকে কারা ঋণ পাবে, তা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালা অনুযায়ী, চলতি মূলধন পাবে মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মাছ চাষ, পোলট্রি ও ডেইরি এবং প্রাণিসম্পদ খাত। কৃষকেরা ছাড়াও যেসব উদ্যোক্তা উৎপাদিত কৃষি পণ্য কিনে সরাসরি বিক্রি করে থাকেন, তাঁরাও এই স্কিমের আওতায় ঋণ নিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এককভাবে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেবে।
ব্যাংক তা সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের দেবে। এই ঋণ সর্বোচ্চ দেড় বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে। প্রথম ছয় মাস কৃষকেরা ঋণ পরিশোধে বিরতি পাবেন এবং পরের ১২ মাসে তা শোধ করতে হবে।
ব্যাংক গ্রাহকদের ঋণ বিতরণ করবে, তাই ঋণ আদায়ের সব দায়দায়িত্ব ব্যাংকেরই। ব্যাংক ঋণ আদায় করতে না পারলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক হবে না। যদি ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা না দেয়, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা কেটে নেবে। এই তহবিল থেকে অর্থ নিয়ে যথাযথ ব্যবহার না হলে অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে সুদসহ এককালীন আদায় করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ তহবিলের নাম ‘কৃষি খাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে এ অর্থায়ন করবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। শুধু চুক্তি স্বাক্ষর করা ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে ঋণসুবিধা নিতে পারবে। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গ্রাহককে ঋণ দিয়ে পুনঃঅর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা এবং সক্ষমতার ভিত্তিতে এই তহবিল থেকে বরাদ্দ পাবে। ঋণ বিতরণের পরেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোকে তহবিল থেকে টাকা দেবে। বর্তমানে যেসব কৃষিঋণের গ্রাহক ঋণসুবিধা নিয়েছেন, তাঁরা সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত এর আওতায় ঋণ নিতে পারবেন। নতুন গ্রাহকেরা এই তহবিল থেকে ঋণ পাবেন, তবে তাঁদের প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই ও সক্ষমতা যাচাই করতে হবে। এ ঋণ দিয়ে আগের কোনো ঋণ সমন্বয় করা যাবে না। পর্যাপ্ত অর্থ পেলে দেশের সার্বিক কৃষি খাত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণে ৫ এপ্রিল ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তৈরি পোশাক খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন চারটিসহ পাঁচটি প্যাকেজে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি খাতের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ একটি।