বৃটেন: করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে তিন সপ্তাহের লকডাউন চলছে বৃটেনে। ২৩ মার্চ ঘোষিত এই লকডাউন শেষ হবে আগামী ১৩ এপ্রিল। লকডাউন ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই লকডাউনের সিদ্ধান্ত রিভিউ করা হবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে তারও বিকল্প হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ঋষি সুনাকের নাম। পাশাপাশি লকডাউনের সময়সীমা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে গণমাধ্যমে। স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে লকডাউনের সময় মে পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর করোনা আক্রান্ত হওয়া, হাসপাতালে ভর্তির পর নিবিড় পরিচর্যায় স্থানান্তর লকডাউন পর্যালোচনার সময়টিকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, পর্যালোচনা ইস্টার সোমবার বা তার আশপাশে হবে। এখন এনএইচএসের ক্ষমতা তৈরি করার সময়। এই রোগের সংক্রমণ বন্ধ করার বিষয়ে এখন আমাদের নিরলসভাবে মনোনিবেশ করা দরকার। আমরা এইভাবেই জীবন বাঁচাব। আমাদের জনগণের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেয়া দরকার যে, এটি কঠিন হলেও আমাদের এটির সাথে চলতে হবে। আমরা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক জটিল সময়ে। এই সময় ঘরে থাকা, এনএইচএস রক্ষা করা এবং জীবন বাঁচানো দরকার। সরকারী চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতারা এখনও নিশ্চিত নন যে, কখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা এবং প্রাণহানির সংখ্যা কমে আসবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাগুলি শিথিল করার কথা বিবেচনা করার জন্য এখন যুক্তরাজ্যের পক্ষে সঠিক মুহূর্ত নয়। পরিবর্তনগুলি কখন আসবে তার সঠিক মুহূর্তটি আমাদের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির মধ্যদিয়ে পরিচালিত হবে।
বৃটেনে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এমন পরিস্কার কোন লক্ষণ এখনো দৃশ্যমান নয়। উল্টো চলতি সপ্তাহে রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে নাগরিকদের অনেকেই সূর্যস্নানে বেরিয়েছিলেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সূর্যস্নান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন কি দৈনিক শরীর চর্চার জন্য বাইরে যাওয়ার সুযোগটিও বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি অন্তত দুই সপ্তাহর জন্য লকডাউনকে কঠোর করার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে কয়েকদিন ধরে।
যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের ভূমিকাকে সঠিক পথে চলছে বলে মন্তব্য করলেও বৃটেনের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভাইরাসজনিত পরিস্থিতির সবচেয়ে খারাপ অংশটি সম্ভবত এখনো সপ্তাহ দেড়েক দূরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক ড. হ্যানস ক্লুজে বলেছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে এখনই ব্যবস্থা শিথিল করার সময় আসেনি। বরং এখন সমাজের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে দ্বিগুন-তিনগুন করার সময়। এদিকে বরিস জনসন সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক দাতব্য সংস্থাগুলির জন্য ৭৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ডাউনিং স্ট্রিটের করোনভাইরাস সংবাদ সম্মেলনে ঋষি সুনাক বলেছেন, হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন যেখানে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আমি এটাও বলতে পারি যে তিনি বিছানা থেকে দলের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে জড়িত ছিলেন।