বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভণর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন করোনা পরিস্থিতি উত্তর বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকট কাটিয়ে উঠা বড় চ্যালেঞ্জ। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারের এখনই কম্প্রেহনেসিভ অ্যাকশন প্লান করা উচিত। দুই বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে দ্রুত এর বাস্তবায়ন করতে হবে। যেটা দুই বছর পর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সঙ্গে যোগ হবে। প্রধানমন্ত্রী প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সেটাতে কিছুটা হয়তো অর্থনীতি সচল হবে। চ্যালেঞ্জটা হলো এ প্যাকেজে যা দিয়েছেন সেটা বেশীর ভাগ ব্যাংক নির্ভর ও ঋণ নির্ভর। ব্যাংকের মাধ্যমে সেগুলো দিতে হবে।
এখন ব্যাংক খাতের যা অবস্থা কতদূর এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে সেটাই হচ্ছে বড় কথা । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং এর আওতায় দ্রুত, দক্ষ ও সততার সঙ্গে বাস্তবায়নটা হচ্ছে এখানে সবচেয়ে বড় বিষয়। আর এ প্যাকেজটি কিন্তু সব সেক্টর কভার করেনা । বেশীর ভাগই শিল্প কারখানা সংশিষ্ট বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। ছোট ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো এর সুবিধা পাবে না। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকগুলো খুব সহজ শর্তে ঋণ দেবে-এনিয়ে প্রশ্ন আছে। সাধারণত এরা ঋণ দেয়না। দিলেও আঠারো উনিশ পার্সেন্ট সুদে দেয় তাও খুব কম। ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই খাতে সবচেয়ে বেশী ঋণ দেয়। বাকীরা খুব কম। সরকার হয়তো সুরক্ষা খাতে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সহায়তা করবে এগুলো তো যথেষ্ট না। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের বাহিরে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক অনেক আছে। তাদের কি হবে ? তাদের তো কোন আয় নাই। সবচেয়ে দু:খজনক আমাদের যেহেতু সামাজিক সুরক্ষা নাই। বীমা নাই। এদের নিয়ে তো চিন্তা ভাবনা করতে হবে। একটা ঠোঙ্গা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করলেই তা যথেষ্ট নয়। তাদের কে তো অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়। আর যারা প্রবাসী শ্রমিক দেশে এসেছে, সে বেকার হয়ে আছে। তাদের বিষয়ে কি করবে ? যে সব প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবার দেশে আছে তাদের পক্ষে কি করবেন ? প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিছু করবে আমার তো মনে হয় না তারা কিছু করবে। এখন সরকারের যা করা উচিত আমাদের শ্রমিকরা যেসব দেশে কাজে নিয়োজিত আছে তাদেরকে যেন পাঠিয়ে না দেয় এজন্য কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করা দরকার। তারা যেন বেকার হয়ে নায় যায়। কৃষি খাতেও একই অবস্থা।পোলট্রি ও মৎস্য খাতও আক্রান্ত হচ্ছে। আমি মনে করি সকল মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে অ্যাকশন প্ল্যান করতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে শুধু সরকার কাজ করলে হবেনা প্রাইভেট সেক্টরও কাজ করতে হবে। গার্মেন্টস সেক্টরের নেতারা বলছেন সরকারকেই সব করতে হবে। তারা নিজেরাই তো বলতে পারে যে আগামী ছয়মাস আমরা প্রফিট নেবো না। তা না করে গার্মেন্টস মালিকেরা নিজেদের হিসেব নিকেশ নিয়ে ব্যস্ত আছে। এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণের সুদ নিবে কিনা সে বিষয়টিও দেখার আছে। দরিদ্রদের মাঝে শুধু খাবার পৌঁছে দেয়া কোন সমাধান নয়। তাদের মাঝে যদি আপনি অর্থ পৌছে দিতে পারেন সেটাই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা। কারণ এটা দু’একদিনের বিষয় না। করোনার প্রভাবতো অনেক দিন থাকবে।