ঢাকা: লকডাউন। মরণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপি চলছে লকডাউন। কোথাও প্রশাসন, কোথাও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ঢাকার প্রায় ৫২ এলাকায় এ পর্যন্ত সহস্রািধক বাড়ি লকডাউন করেছে পুলিশ। তারপর কেউ কেউ বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করেই বিনা কারণে বাসার বাইরে যাচ্ছেন। আড্ডা দিচ্ছেন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পুরান ঢাকার লালবাগে মঙ্গলবার এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু ঘটে। তারপরই লালবাগের বড় ভাট মসজিদ এলাকার শতাধিক বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন। ওই এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ।
বাইরের কাউকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। একইভাবে ওই এলাকার কাউকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে পিকআপ ভ্যানে করে মাইকিং করছে পুলিশ।
এছাড়া চকবাজারের খাঁজে দেওয়ান রোড এক ও খাজে দেওয়ান রোড দুই এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানান, ওই এলাকার মসজিদ কমিটির সহসভাপতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি সমাজে চলাচল করেছেন এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। ওই লেনের এক নারী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই দুটি ঘটনায় খাজে দেওয়ান লেনে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে ধারণা করে ওই লেনের এক ও নম্বর দুই নম্বর গলি লকডাউন করা হয়েছে। দুটি গলিতে দুই শতাধিক ভবন রয়েছে বলে জানান ওসি।
মিরপুরের টোলারবাগ আবাসিক এলাকা এখনো লকডাউন আছে। ওই এলাকায় অর্ধশত বাড়ি রয়েছে বলে দারুস সালাম থানার ওসি জানান। মঙ্গলবার টোলারবাগের এক নম্বর গেটে গিয়ে দেখা গেছে, বাধা মানছেন না অনেকেই। পুলিশী বাধা ডিঙ্গিয়ে ওই এলাকা থেকে বের হচ্ছেন অনেকে। মঙ্গলবারও করোনা সন্দেহে ওই এলাকার একটি ভবনের ছয় জন বাসিন্দার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া মিরপুর এলাকার তিনটি বাড়ি লকডাউন করা আছে। এরমধ্যে মিরপুর-এক নম্বর এলাকায় দুইটি ভবন ও একটি টিনসেড বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সেখানে এক পরিবারে দুইজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
রোববার মিরপুর-এক নম্বর ওভারব্রিজ সংলগ্ন গলির ওই তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ।
এসব বাড়িতে প্রায় ৩০টি পরিবার বসবাস করে। পল্লবী জোনের সহকারি কমিশনার ফিরোজ কাওসার জানান, একটি পরিবারের দুইজন সদস্য জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয় তাদের। রোববার দু’জনকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া পল্লবীতে তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কোনো কোনো এলাকায় নিজেদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থ নিয়েছেন এলাকাবাসীরাই। বাসাবো এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে লকডাউন করেছেন স্থানীয়রা। বাঁশ বেঁধে বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রাস্তায় পাহারা দিচ্ছেন কয়েক যুবক। বাইরের কাউকে ওই এলাকায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। গত সোমবার থেকে এলাকাবাসীর উদ্যোগে চলছে এই লকডাউন। একইভাবে উত্তর বাসাবোর সাত নম্বর সড়ক এলাকা লকডাউন করেছে এলাকাবাসী। এ এলাকায় একজন পুরুষ ও একজন নারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ওই এলাকায় কয়েক শ’ ভবন রয়েছে।
এছাড়া সূত্রাপুরে দুটি ও প্যারিদাসলেনে একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। রোববার সবুজবাগ থানার দক্ষিণগাঁও এলাকায় নয়টি ভবন লকডাউন করেছে পুলিশ। ওই এলাকায় দুই পরিবারের সাত জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া জিরো গলি নামে একটি গলি লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। ওই গলিতে অনেকগুলো বাড়ি রয়েছে। ওই এলাকায় বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। গতকাল বিকালে দক্ষিণগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পিকআপ ব্যানে টহল দিচ্ছে পুলিশ। মাইকিং করে সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। এরমধ্যে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েক গাড়িকে ওই এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।
তেজগাওয়ে নয়টি ভবন লকডাউন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-কমিশনার (ডিসি) বিজয় বিপ্লব তালুকদার। ওদিকে ভাটারা আবাসিক এলাকার পাঁচ নম্বর সড়কের বি-ব্লকের একটি বাড়ির নারী বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খবর পেয়ে ওই ভবনটি লকডাউন করা হয়েছে। একইভাবে মোহাম্মদপুর এবং আদাবরের ছয়টি এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। এসব এলাকায় পাঁচ শতাধিক বাড়ি রয়েছে। ওই এলাকার কয়েকজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবারই বাসাগুলো চিহ্নিত করে এসব এলাকা লকডাউন করা হয়।
এরমধ্যে কৃষি মার্কেটের সামনে, তাজমহল রোড মিনার মসজিদ এলাকা, রাজিয়া সুলতানা রোড, বাবর রোড, বছিলা ও আদাবর এলাকার বেশ কিছু বাড়ি রয়েছে। এসব এলাকার রাস্তায় লাল ফিতা, লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে যান চলাচল।
ওয়ারী এলাকায় সাতটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ওয়ারী জোনের কদমতলীর মুরাদপুরের একটি বাড়ি, শনির আখড়ায় একটি বাড়ি, বনগ্রামে একটি ভবন, রেংকিং স্ট্রিটে একটি বাড়ি, গেন্ডারিয়ার গুরুদাস লেনের একটি বাড়ি, যাত্রাবাড়ির মিরহাজীরবাগের একটি বাড়ি ও ডেমরার ধার্মিকপাড়ায় একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। বংশালে করোনা আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে মঙ্গলবার। তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার ফুলবাড়িয়ার পশু হাসপাতাল রোডের একটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, জনস্বার্থে বিপুল বাড়ি লগডাউন করা হয়েছে। সঠিক সংখ্যা নেই। তবে সহস্রাধিক বাড়ি হবে বলে জানান তিনি।