ঢাকা: স্পট জনসন রোড। কোট কাচারি এলাকা। ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে লম্বা লাইন। ফুটপাতে চক পাউডার দিয়ে গোল বৃত্ত আঁকা। আর কিছুদূর পরপর আঁকা এই গোল বৃত্তে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ন্যায্যমূল্যের পণ্যের জন্য অর্ধশত মানুষ। দুপুর একটায় ট্রাক আসে। কিন্তু লাইন শুরু হয়ে যায় দুপুর বারোটা থেকেই। এত আগে লাইনে কেন? প্রশ্ন শুনতেই ক্লিনার ওবায়দুল বলে ওঠেন, ‘তিনদিন ধইরা লাইন ধরি, মাল পাইনা।
সামনে যেতে যেতে সব শেষ।’ বিকালে অফিস ছুটির পর লাইনে দাঁড়ায় বলে এমন অসুবিধার কথা জানালেন তিনি।
লাইনে দাঁড়ানো সাবিত্রী রানী দাস। একরামপুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো লাইনে দাঁড়িয়েছেন। চাকরি করেন বেসরকারি হাসপাতালে। বললেন, দশদিন গেছে লকডাইনের। ছোট চাকরি করি। বেতন পামু কিনা ঠিক নাই। ঘরে চাল ডাল শেষ। খামু কি? লজ্জা কইরা লাভ নাই। তাই বাধ্য হয়ে ন্যায্যমূল্যের লাইনে দাঁড়াইছি।
সদরঘাটে লঞ্চে যাত্রী টানার কাজ করেন সূত্রাপুরের বারেক আলী। একই সুরে কথা বললেন তিনিও। লকডাউনে লঞ্চ বন্ধ। দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন। এখন কাজ নেই, আয়ও নেই। কি আর করা। পাঁচজনের পরিবার। চলার আর অন্য কোন উপায় তো নেই। ন্যায্যমূল্যের পণ্য কিনে কিছুদিন চলবেন। তাও না পারলে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াবেন। শাঁখারীবাজার, রায়সা বাজার, তাঁতীবাজার এলাকার অনেকেই আসেন জনসন রোডের এই খোলাবাজারের ট্রাকের পণ্য কিনতে।
জনসন রোড থেকে লক্ষ্মীবাজার। চোখে পড়ে একইরকম চিত্র। লম্বা লাইনে অপেক্ষায় আছে ক্রেতারা কখন মিলবে চাল, ডাল, তেল। এরপর টিকাটুলি। ইত্তেফাক ভবনের সমানে লম্বা লাইন। পেছন থেকে কথা হলো জুয়েল, রহমান, হাফিজ ও ওবায়দুলের সঙ্গে। ওষধের খুচরা বিক্রেতা জুয়েল কর্মচারী দোকানে রেখে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সমানে রমজান, তারওপর লকডাউন চলছে কিছু জরুরি পণ্য নিতেই অপেক্ষা।
ট্রাকের বিক্রয়কর্মী রাশেদ, আজাদ, হৃদয় জানান, এখন প্রতিদিনই লাইন বড় হচ্ছে। পণ্য যা নিয়ে আসছেন তার সবই শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই আশঙ্কা করছেন পণ্য পাবেন কিনা এ নিয়ে। মুগদা, কমলাপুর, বাসাবো এলাকার দৃশ্যও একইরকম।