করোনা উপসর্গ তাই রাস্তায় লাশ, পালিয়ে গেল অ্যাম্বুলেন্স

Slider জাতীয় টপ নিউজ বিচিত্র


নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় জ্বর-সর্দিসহ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সংগীতাঙ্গনের জনপ্রিয় বেজ গিটারিস্ট রাকিব ওরফে হিরু। সোমবার দিবাগত রাত ২টায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর পরপরই তার মরদেহ চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে এনে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। কোনো খাট ছিল না। এমনকি একটা মানুষও ছিল না লাশটির কাছে! সারারাত লাশটি রাস্তায়’ই পড়েছিল।

এর আগে তার শারীরিক অবস্থার যখন অবনতি হয় তখন তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। কিন্তু রোগীর জ্বর-সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট রয়েছে জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স চালকও গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।

ফলশ্রুতিতে তাকে আর হাসপাতাল পর্যন্ত নেয়া যায়নি। ডাক্তার, ওষুধ, চিকিৎসার অভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হিরু। তিনি নারায়ণগঞ্জে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। পরিবারের কোনো পুরুষ লোক ছিল না। এলাকাবাসীও এগিয়ে আসেনি। যার কারণে বেওয়ারিশ লাশের মতই হিরুর মরদেহটি রতভর পড়েছিল রাস্তায়।
এদিকে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকার খবরটি জানার পর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা স্থানীয় থানা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার টিমসহ। তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় লাশ দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

আফসানা আফরোজ বিভা জানিয়েছেন, হিরু গত দুই বছর ধরেই চর্মজনিত রোগে ভুগছিলেন। এরমধ্যে গত ২৬ মার্চ থেকে তার জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়। পরে শহরের একজন প্রাইভেট ডাক্তারকে দেখালে বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। এতে তার ফুসফুসে পানি জমা ছিল বলে চিকিৎসকরা জানান এবং ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে ওষুধ খেতে বলেন। কিন্তু জ্বর, সর্দি আর শ্বাসকষ্ট না কমায় তার পরিবার এরমধ্যে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে চিকৎসকরা ভর্তি না নিয়ে পুনরায় ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে তাকে ছেড়ে দেন। সোমবার তার শ্বাস কষ্টের সমস্যা আরও প্রকট হয়। এরমধ্যে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি বাড়িতেই মারা যান।

এদিকে হিরোর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সোমবার রাতে হিরুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ফের ঢাকায় নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করেন। হিরুকে বাইরে আনা হয়, অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোরও প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু জ্বর-সর্দি শ্বাসকষ্টের রোগী শুনে করোনা আতঙ্কে চালক পালিয়ে যায়। এরপরই তিনি মারা যান। ফলে তার মরদেহ আর বাড়িতে না ঢুকিয়ে গেটের কাছেই ফেলে রাখা হয়।

এদিকে একটি পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, হিরুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তার পরিবার। কিন্তু এলাকাবাসী প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দিবে না এবং বের হতেও দিবে না জানিয়ে বাধাও দিয়েছিলেন।

তবে, এ অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *