ঢাকা: চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও বাঁচতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী সুমন চাকমা। কোনো চিকিৎসকও তাকে সেবা দিতে রাজি হননি। করোনাভাইরাস আতঙ্কে এই ঢাবি শিক্ষার্থীকে সবাই ফিরিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালের ফটক থেকে। উপায় না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যান সুমন। কিন্তু শেষ রক্ষাও হয়নি, সেখান থেকে একেবারে না ফেরার দেশেই পাড়ি জমান সুমন চাকমা। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই যুবক।
খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার আগালাশিংপাড়ার দাতকুপ্যা গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাহাড়ি জীবনের নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গ-ি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বড় স্বপ্ন বুকে নিয়ে। কিন্তু আড়াই বছর পরই অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুন মাসে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। সমাজের নানা শ্রেণির বিত্তবানদের সহায়তায় চিকিৎসাও নিতে থাকেন তিনি। বেঁচে থাকার সাহস নিয়ে ভারতের বেশকিছু হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে যান তিনি। ক্যান্সারের কারণে ঘাড়ে ও পিঠে প্রচ- ব্যথা শুরু হলে ভারতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার। এরপর ওষুধের জন্য ভারতের চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে দেখা যায় তাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বজুড়ে থাবা বসায় করোনাভাইরাস। দেশেই চিকিৎসা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে সুমনের। হাসপাতাল আর চিকিৎসকদের ফিরিয়ে দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি ২৬ মার্চ সকালে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আমার করোনা হয়নি, অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে।’ সুমনের সেই শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হলো ১১ দিন পার না হতেই। চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে প্রাণ হারাতে হলো এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে। সুমন চাকমার বাবা সুপেন চাকমা বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে সুমন ক্যান্সারে অসুস্থ। বাংলাদেশ ও ভারতে কয়েকবার ডাক্তারও দেখানো হয়েছিল। এ বছর থেকে সুস্থ হয়ে ক্লাসও শুরু করেছিল। তৃতীয় বর্ষের মিড পরীক্ষা দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। সে ছুটিতে বাড়ি চলে আসে। তারপর সে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার পাঁচ-ছয়টি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু তারা কেউ করোনার ভয়ে তার চিকিৎসা দেয়নি। ঢাকা থেকে ডাক্তার না দেখিয়েই বাড়ি চলে আসতে হলো। পরে চট্টগ্রামে এক হোমিও চিকিৎসকের কাছ থেকে ২৪ দিনের ওষুধ নিয়েছি। কয়েক দিনের ওষুধ নিয়ে আসছিলাম। পরে ওষুধ শেষ হওয়ার পর আর আনা যাচ্ছিল না। গাড়ি বন্ধ ছিল। ভালো চিকিৎসা ও ওষুধের অভাবে ছেলেটাকে হারিয়ে ফেললাম।