খিলগাও তালতলা কবরস্থান। তখন পশ্চিমের অাকাশের প্রায় সূর্যটা ডুবতে বসেছে। কোথাও কেউ নেই। নীরবতা ভেঙ্গে পাঁচজন ব্যক্তি কবরস্থানের ঝিলপাড়ের প্রান্তে গিয়ে নেমেছেন। প্রত্যেকের পরনে ছিলো পিপিই। অ্যাম্বুলেন্স থেকে একটি স্ট্রেচারে করে সাদা কাফনে মোড়ানো নামানো হচ্ছে একটি লাশ। নেই স্বজনদের কান্না। নেই মানুষের ভীড়।
এই যেনো এক অচেনা পরিবেশ। এমন পরিবেশে কবরস্থানের ইমাম ও উপস্থিত আটজন মিলে পড়েন জানাজা । জানাজা শেষে স্ট্রেচারে করে মৃতদেহটি কবরের কাছে নেন তারা।
পরে পিপিই পরা তিনজন মিলে মৃতদেহটি কবরে নামান। কবরে দেহ নামানোর পর মাটি দেয়া হয়। লাশ নামানো ,লাশ মাটি দেয়ার মূহুর্তে থম থমে পরিবেশ। কে লাশ ধরবে, কে নামাবে এমন সিদ্ধান্তহীনতা! এভাবেই দাফন করলেন স্ত্রীকে।
গত শনিবার মোহাম্মদপুরের নজরুল রোডে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান রাবেয়া অাক্তার নামের ৫০বছর বয়সী এক নারী। জ্বর ও সর্দি থাকা এই নারীর মৃত্যুর পর তাকে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সিপাহীবাগের চারতলা গলির বাসিন্দা দিপ্ত সরকার বলেন, তখন সন্ধ্যা ছয়টা বাজবে। তালতলা কবরস্থানে দুটি অ্যাম্বুলেন্স অাসে । অ্যাম্বুলেন্স দুটি কবরস্থানের শেষ মাথায় ঝিলপাড়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে থামে। একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামেন পাঁচ ব্যক্তি।
তাদের প্রত্যেকের পরনে ছিল ব্যক্তিগত সুরক্ষার সরঞ্জাম । তারা প্রথম অ্যাম্বুলেন্স থেকে একটি স্ট্রেচারে করে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশটি নামান। এরপর কবরস্থানের ইমাম ও উপস্থিত আটজন মিলে জানাজা পড়েন। কবর দেন।
জানাগেছে, মৃত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে সন্দেহ করছেন স্বজনরা। তাই এমন দাফন করতে বাধ্য হয়েছে তারা। প্রদক্ষদর্শীরা জানান, দাফনে অংশ নেয়া ওই পাঁচজন কবরস্থানের ঝিলের পাড়ে এসে পিপিই খুলে ফেলেন। পিপিইগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তা নষ্ট করেন তারা।
এর মধ্যেই ফেসবুকে এই দাফনের ৯ মিনিটের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে যায় দেখা পুরো দৃশ্যটি ধারণ করা ছিলো। নেটিজেনরা এই ভিডিও শেয়ার করে অাবেগন স্ট্যাসও দিচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানের স্টাফ মো. ফেরদৌস এই প্রতিবেদককে বলেন, ওই নারীর স্বামী ও সন্তানরা দাফনে উপস্থিত ছিলেন। দাফনের আগে তারা কয়েকজন জানাজা পড়েন। অামাদের কয়েকজন তাদের সহযোগিতা করেছে। বাশ ও অন্যান বিষয়গুলো তাদেরকে অামরা দিয়েছি। এই সময় অামাদের সমাজ কল্যান অফিসার স্যার উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জানা যায়, মৃত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না, তা এখনও জানতে পারেননি ওই পরিবারের স্বজনরা। তবে ওই নারী কয়েকদিন ধরেই সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। খুব বেশি অসুস্থ ছিলেন না । তবে হাসপাতালে নেয়া হয়নি ওই মহিলাকে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আইইডিসিআরে (সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানক) জানানো হলে গতকাল সকাল এগারোটায় তাদের মোহাম্মদপুরের বাসায় এসে নমুনা নিয়েছে। তবে পরীক্ষার ফল এখনও পাওয়া যায়নি।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, শনিবার রাতে ওই মহিলা মারা যাওয়ার পর অামরা খোজ খবর নিয়েছি। এবং টেস্ট করার জন্য বিষয়টি অামরা সংশ্লিস্টদের কাছে জানিয়েছি, তারা মৃত ব্যক্তির নমুনা নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাঁকে খিলগাঁওয়ের তালতলা কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।