ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা সঙ্কটের মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মুক্তির সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ মেনে গুলশানের নিজ বাসা ফিরোজায় ‘হোম কোয়ারেন্টিনে ’ আছেন তিনি।
তবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলেও স্যোসাল এবং অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে নিকট-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। দেশের বাইরে থাকা ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনীদের সাথে স্কাইপে কথা বলছেন। ঢাকায় থাকা ভাই-বোন, তাদের ছেলেমেয়ের সান্নিধ্যও পাচ্ছেন খালেদা জিয়া। সঙ্গত কারণেই শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও মানসিকভাবে অনেকটাই ভালো অনুভব করছেন বিএনপি নেত্রী।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফলমূল ছাড়া বাইরের কোনো খাবার খালেদা জিয়া খাচ্ছেন না। যেটুকু খাবার তিনি গ্রহণ করছেন, তা বাসা ফিরোজায়ই রান্না হচ্ছে। নিয়মিত শেফই তার রান্না করছেন। মাঝে মাঝে বোনের বাসা থেকে আসছে পছন্দের খাবার। খালেদা জিয়া কখন কী খাবেন তা দেখভাল করছেন বোন সেলিমা ইসলাম।
রান্নার কাজটা বাদে খালেদা জিয়ার গৃহকর্ম পুরোটাই করছেন সেই ফাতেমা বেগম; যিনি খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে ছিলেন। কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে ডাক্তার ছাড়া বাইরের লোক বাড়ির ভেতরে প্রবেশ নিষেধ থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে দেখা করছেন না তিনি। সিনিয়র নেতারা খোঁজ রাখছেন মুঠোফোনে।
বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন, বাসায় আসার পর থেকেই তিনি অনেক হাসি-খুশি। দলীয় কোনো কথা তোলেননি এখনো। তাকে ফ্রেশও লাগছে। দুই বছর পর পরিবারের সবাইকে পেয়ে অনেক খুশি তিনি। বাসায় ফেরার প্রথম রাতে সবার সঙ্গে খেয়েছেন। ঘুমিয়েছেন ১০টা বাজতেই। ভোরে উঠে নামাজ আদায় করছেন। প্রাত্যহিক জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে তার। এভাবেই তার সময় কাটছে।
পারিবারিক সূত্র মতে, লন্ডনে অবস্থানরত পূত্রবধূ ডা: জোবাইদা রহমানের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় ডাক্তাররা তার দেখভাল করছেন। চিকিৎসার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে তারা জোবাইদার পরামর্শ নিচ্ছেন।
চিকিৎসা বোর্ডের চিকিৎসকরা নিয়মিত চেকআপ করছেন। এরই মধ্যে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: এফ এফ সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক ডা: রাজিবুল আলম, অধ্যাপক ডা: আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা: হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক ডা: জাহিদ হোসেন ও ডা: মামুন তাকে দেখেছেন। জোবাইদা রহমানের সঙ্গে কথা বলে নতুন প্রেসক্রিপশন করেছেন তারা। হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে নতুন চিকিৎসা শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন। এখন প্রধান কাজ হলো তাকে একা থাকতে দেয়া। তারপরও আমরা সেদিন গিয়ে দেখে এসেছি। আগের ওষুধগুলোই চলছে। কোয়ারেন্টিন শেষ হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নতুন ওষুধ শুরু করা হবে। এখন উনি আগের চেয়ে ভালো আছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। তিনি সবার কাছে নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পরেই সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তার বাড়ির সামনে ভিড় না করতেও তিনি অনুরোধ করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ম্যাডামের পায়ের ব্যথা বেড়েছে। যেহেতু তিনি কোয়ারেন্টিনে আছেন, তাই আগে এই কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হোক। এরপর পুরোমাত্রায় চিকিৎসা শুরু হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনিও উদ্বিগ্ন আছেন বলে জানান শায়রুল কবির।
খালেদা জিয়ার বাসভবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রধানকে চিঠি : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রধানকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, আইজিপি বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে গত ২৫ মার্চ। চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার চিঠিটি পাঠিয়েছেন। চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে ঢাকার পুলিশ কমিশনারকেও।