রাতুল মন্ডল শ্রীপুর:শিল্পঅঞ্চলখ্যাত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা। এই উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে লাখ লাখ শ্রমিক। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারী ও মালিক সমিতির বন্ধ ঘোষণার পরপরই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দল বেঁধে বাড়ি ফেরার চিত্র বেশ লক্ষনীয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির পরও কিছুতেই ঠেকাতে পারছে না তাদের বাড়ি ফেরা।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাজের সুবাদে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বসবাস করেন হাজারো শ্রমিক। করোনা সংক্রামক ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে দেশের অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও চলছে অঘোষিত লক ডাউন। করোনা ভাইরাস সংক্রামন রোধে সরকার সকলকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিলেও এখানকার কর্মজীবি সাধারণ মানুষ যাচ্ছেন গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের কাছে। সরকার গণপরিবহন বন্ধ রাখায় বাড়ি যেতে যানবাহনের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। চাহিদামত যানবাহন না থাকায় ট্রাক-পিক আপকে বেছে নিয়েছেন তারা। তবে ঢাকামুখী পবিহনের কোন চাপ দেখা যায়নি।
শনিবার বেলা ১১টায় উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় কথা হয় কারখানা শ্রমিক তোফাজ্জল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, কারখানার ছুটি ঘোষণা করায় তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ময়মনসিংহের তারাকান্দার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। মহাসড়কে বাস না পেয়ে জনপ্রতি ১শ পঞ্চাশ টাকা ভাড়ায় পিক আপে উঠেছেন। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে ময়মনসিংহ পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়।
ঢাকার একটি দোকানে চাকরী করেন অপর যাত্রী রোকরুনুজামান। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন যান পাল্টে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এসেছেন। এখনেও তিনি ১শ পঞ্চাশ টাকায় ভাড়ায় পিক-আপে উঠেছেন। স্বাভাবিক সময়ে দীর্ঘদিনেও ছুটি হয় না, স্ত্রী-সন্তানদের সময় দেয়াও হয়ে উঠে না। করোনা ভাইরাসের কারণে যে বন্ধ পেয়েছেন তা তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সকলকে সাথে ভোগ করতে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন।
গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ভাসমান দোকানের ব্যবসা করেন কায়সার আহমেদ। তিনি জানান, আগে থেকেও কোন টাকা পয়সা সঞ্চয় করে রাখতে পারিনি। অনেকটা দিন এনে দিনে খাওয়ার মতো চলতে হয়। আজকে চার-পাঁচ দিন যাবৎ কোন আয় রোজগার নেই। কিছু টাকা হাতে ছিল, এগুলো ভাড়া বাবদ দিয়ে স্ত্রী, সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে রাখার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। মহাসড়কে বাস বন্ধ থাকায় যান হিসেবে পিক আপকেই বেছে নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সরকার ঘরে থাকার নির্দেশনা দিলেও আমাদের ঘরে বসে থাকার কোন অবস্থা নেই। কাজ করলে পেটে খাবার জুটে, আর কাজ করলে কি খাবো, কে আমাদের খাওয়াবে। বিভিন্ন শঙ্কা মাথায় নিয়েই তিনি বাড়িতে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক বলেন, করোনা সংক্রামন ঠেকাতে সরকার সকলকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিলেও অনেকেই তা মানছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা ট্রাক-পিক আপকেই বেছে নিয়েছেন। তবে এতে ঝুকি থাকার পাশাপাশি সরকারে নির্দেশ অমান্য করছেন। হাইওয়ে পুলিশ বিভিন্ন মহাসড়কে ওই সকল ট্রাক-পিক আপ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার পাশাপাশি যাত্রীবাহী ট্রাক-পিক আপের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।