শুধু লাশ আর লাশ, ইতালিতে একদিনে মৃত্যু ৯ শতাধিক

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা

শুধু লাশ আর লাশ। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ। একটি দুটি নয়। একদিনে ৯ শতাধিক। তা দেখে হতবিহ্বল ইতালি। আত্মীয়-স্বজনরা যেমন শোকে নির্বাক, তেমনি গোটা দেশ। আর বিশ^! মুখে হাত দিয়ে হতাশা নিয়ে দেখছে সে দৃশ্য। ভয়ে থর থর করে কাঁপছে পুরো দুনিয়া।
বৃটেনে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনায় আক্রান্ত। প্রিন্স চার্লস করোনায় আক্রান্ত। দুনিয়াজুড়ে এ যেন করোনা নয়, অভিশাপ হানা দিয়েছে। একের পর এক মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

একদিনে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় ইতালিতে মারা গেছেন ৯ শতাধিক। এ নিয়ে শুধু ইতালিতে এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা অতিক্রম করেছে ৯১৩৪। মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে এ সংখ্যা রেকর্ড। এর আগে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, সুরক্ষা সরঞ্জামের ভয়াবহ এক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বিশ^জুড়ে। তিনি এ সঙ্কটকে ‘ক্রোনিক গ্লোবাল শর্টেজ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, এই সুরক্ষা সরঞ্জাম হলো জীব রক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ। ইউরোপের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইতালিতে। জনগণকে বাড়ির ভিতর থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিধিনিষিধের মেয়াদ ৩রা এপ্রিলের পরেও বৃদ্ধি করা হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

ইতালির লোম্বারডি যেন মৃত্যুপুরী। করোনা সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে এখানে।। দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে মৃতের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার সেখানে মৃতের সংখ্যা কমে এসেছিল। এতে আশার আলো দেখছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু শুক্রবার আবার বেড়ে যায় শবমিছিলের সংখ্যা। এতে এক একটি দিনে সেখানে যেন এক একটি গ্রামে বসবাসকারী মোট মানুষের সংখ্যা বিনাশ হয়ে যাচ্ছে। করুণ কান্নায় নিঃশে^ষ হয়ে যাচ্ছে এক একটি গ্রাম। এমন এক ট্রাজেডির সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিটি মুহূর্ত লড়াই করছে ইতালি। গত ২৪ ঘন্টায় শুধু লোম্বারডিতে মারা গেছেন ৫৪১ জন।

সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখা গেলেও তা আবার নিভে আসছে। নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার হার কমে এলেও মৃতের সংখ্যা শুধু বাড়ছেই। দু’সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে লকডাউনের। কিন্তু অগ্রগতি খুব ধীর গতির। এখানে করোনা হানা দেয়ার পর মারা গেছেন কমপক্ষে ৪৬ জন ডাক্তার। এখন যেটা স্পষ্ট তা হলো, নিয়ন্ত্রণমুলক ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধি করা হতে পারে, সম্ভবত কয়েক মাসও তা হতে পারে বলে জানিয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সিল। এটা হলে উদ্বেগ শুধু ইতালির নয়, বিশে^র জন্যও বড় এক অশনিসংকেত।

ওদিকে পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, তার মধ্যে শুধু হাল্কা লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তাই তিনি ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাসায় স্বেচ্ছা আইসোলেশনে গিয়েছেন। সেখান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি সরকারি কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন। ওদিকে ইউরোপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের দেশ স্পেন। সেখানে দ্রুত বেড়েছে মৃতের সংখ্যা। সর্বশেষ রেকর্ড করা ২৪ ঘন্টায় সেখানে মারা গেছেন ৭৬৯ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট মারা গেলেন ৪৮৫৮ জন। কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে নতুন আক্রান্তের ঘটনা স্থিতিশীল রয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৫৯। বুধবার সেখানে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছিল ২০ ভাগ। বৃহস্পতিবার শতকরা ১৮ ভাগ এবং শুক্রবার শতকরা ১৪ ভাগ। অর্থাৎ আস্তে আস্তে সেখানে আক্রান্তের হার কমে এসেছে।

শুক্রবার ২৪ ঘন্টায় ফ্রান্সে মারা গেছেন ২৯৯ জন। আগের দিনের চেয়ে এই সংখ্যা সামান্যই কম। সেখানে সব মিলিয়ে করোনায় মারা গেছেন ১৯৯৫ জন মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার। শুক্রবার ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ডো ফিলিপ ঘোষণা দিয়েছেন, দেশবাসীকে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত ঘরের ভিতর অবস্থান করতে হবে। আগের সময়সীমা এক্ষেত্রে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *