ঢাকা: বিরোধী জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে ট্রেনের শিডিউল ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ট্রেনের গতি কমানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, কম গতির ট্রেনের আগে অ্যাডভান্স পাইলটিংয়েরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরও গাজীপুর, কুমিল্লা, ফেনীতে রেললাইন উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শনিবার কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
ট্রেন চলাচলে বিপর্যয়ের বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকার বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) কামরুল আহসান গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের ফিসপ্লেট উপড়ে ফেলায় দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া অ্যাডভান্স পাইলটিং (আগে অতিরিক্ত ইঞ্জিন পাঠিয়ে পরীক্ষা) করে ট্রেন লাইনে কোনো সমস্যা আছে কি না তা যাচাই করে নেয়া হচ্ছে। এ কারণে ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে ট্রেন।
বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধের কারণে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ট্রেনের দিকে ঝুঁকছেন যাত্রীরা। কিন্তু বিগত হরতালগুলোতে ট্রেন চলাচল করলেও অবরোধের ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটছে। টানা অবরোধে রেললাইনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এতে দুর্ঘটনার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকছে।
গতকাল রাতের কোনো এক সময় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট স্টেশনের পাশে রেললাইনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলে এবং তিন ফুটের মতো রেললাইন কেটে ফেলে। ভোর পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেস সেখানে পৌঁছলে ইঞ্জিন ও একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলযোগাযোগ। ওই রেলপথে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন রেলস্টেশনে আটকা পড়ে। লাইনচ্যুত বগি ও ইঞ্জিন উদ্ধার এবং লাইন মেরামতের পর বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় নির্ধারিত থাকলেও ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ে রাত ৮টা ১০ মিনিটে।
এ কারণে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশনে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, বেশির ভাগ ট্রেনই নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পর স্টেশনে এসেছে এবং ঢাকা থেকে ছেড়েছে।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের বদলে ছেড়েছে ১২টায়। সুবর্ণ এক্সপ্রেস বেলা ৩টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ে বিকেল সোয়া ৫টায়। চট্টলা এক্সপ্রেস বেলা ১১টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ে বেলা ২টায়। জামালপুরগামী অগ্নিবীণা ৯টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়েছে ১১টায়।
সিলেটের উদ্দেশে জয়ন্তিকা দুপুর ১২টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা সন্ধ্যা ৭টার আগে কমলাপুর স্টেশনে আসার কোনো লণ দেখছেন না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। ট্রেনটি এলেও ঠিক কয়টায় ছেড়ে যাবে তাও জানাতে পারছেন না রেলওয়ে কর্মকর্তারা। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস বিকেল ৫টার পর ছাড়া হয়। এ দিকে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন থেকে জানানো হয় রাত সোয়া ১০টায় ট্রেনটি ছাড়বে।
বিকেলে চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলি ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে রেললাইন উপড়ে ফেলার কারণে তার যাত্রা বাতিল করে রেলওয়ে কর্তৃপ। একই সাথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর প্রভাতীরও যাত্রা বাতিল করা হয়।
এ দিকে শিডিউল বিপর্যয় আর যাত্রা বাতিলের কারণে কমলাপুর স্টেশনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যাত্রীরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হন। কাউন্টারে গিয়েও পাওয়া যায়নি কোনো ব্যক্তিকে। দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেনকে দেখা গেছে যাত্রীদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে। পরবর্তী ট্রেনগুলো ঠিক কয়টায় ছাড়বেÑ যাত্রীদের এমন প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর হিসাব করে সঠিক দিতে পারছেন না তিনি।
সাখাওয়াত বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এমন পরিস্থিতিতেও ট্রেনের চাকা সচল রাখতে। কিন্তু ট্রেন শিডিউলে এদিক-ওদিক হচ্ছে। কমলাপুর স্টেশন ঘুরে আরো দেখা যায়, হাজারো যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেমাণ। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রী সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেলা ৩টায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকায় এক ঘণ্টা আগেই স্টেশনে এসেছি। কিন্তু ট্রেনটি ছাড়ল সোয়া ৫টায়। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কষ্টে আছি ভাই।
সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, দুপুর ১২টায় ট্রেনটি আসার কথা, কিন্তু স্টেশনে পরিবার নিয়ে দেড় ঘণ্টা বসার পর জানলাম সন্ধ্যার পর ট্রেনটি কমলাপুরে পৌঁছতে পারে।
চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলির যাত্রা বাতিল হওয়ায় এর টিকিট ফেরতের হিড়িক দেখা গেছে কাউন্টারের সামনে। টিকিট ফেরত দিতে কাউন্টারের সামনে উপচে পড়া ভিড় ল করা গেছে।