কে মরি, কে বাঁচি জানি না

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা বাধ ভাঙ্গা মত

মতিউর রহমান চৌধুরী: কে মরি, কে বাঁচি জানি না। জানে শুধু উপরওয়ালা। তার হাতেই সবকিছু। চারদিক থেকে একের পর এক খারাপ খবর আসছে। দেশে এবং বিদেশে একই অবস্থা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ কার্যত লকডাউন হয়ে গেছে। এটা একটি উত্তম ব্যবস্থা। আরো আগে হলে ভালো হতো।

সবকিছু থেমে গেছে। রাজনীতির লড়াইও নির্বাসনে। অফিস-আদালত বন্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। গণপরিবহনের চাকাও ঘুরছে না। বিমানবন্দরও ফাঁকা। ট্রেনের চাকাও থেমে গেছে। হোটেল-রেস্তরাঁ বন্ধ। যারা মেসে থাকেন অনুমান করুন তারা কীভাবে আছেন? ‘বুয়ারা’ নিজের তাগিদেই বাড়ি চলে গেছেন। আর বস্তি! তাদের তো সীমাহীন কষ্ট। আমাদের অতিথি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে। ঢাকার কাঁচাবাজার খোলা। তবে সবাই সতর্ক। ওষুধের দোকান চালু রয়েছে। ঢাকার রাজপথের চেহারা এর আগে এমন কখনো দেখিনি। এমনকি কারফিউর সময়ও মানুষজন উঁকিঝুঁকি মারে। এখন সেটাও চোখে পড়ছে না। দু’-এক জায়গায় কিছু মানুষ হেঁটে কোথাও যাচ্ছে- এমন খবর পাচ্ছি। আমি নিজেই ১২ দিন বাড়িতে স্বেচ্ছাবন্দি। অফিসে যাই না। চ্যানেল আইতে যাওয়াও বন্ধ। তবে ঘরে বসে ভয়েস অব আমেরিকার জন্য রিপোর্ট তৈরি করি প্রতিদিন। দরোজায় এখন আর কেউ নক করে না। কাজের মানুষও আসে না। গাড়ির চালকও চলে গেছে আইসোলেশনে।

বাড়িতে বসে অনলাইন দেখি। কখনো চোখ রাখি টিভির পর্দায়। কিছুই ভালো লাগে না। স্ত্রীর সঙ্গে বসে কিছু সময় কাটাই। গল্প করি। বিলেতে অবস্থানরত ছেলের সঙ্গেও কথা বলি। সেও আইসোলেশনে। মাঝে-মধ্যে পুরনো দিনের বাংলা ছবি দেখি। মন্দ লাগে না। চিকিৎসকদের পরামর্শ- আমি নাকি ঝুঁকি গ্রুপে রয়েছি। সহকর্মীরা জান বাজি রেখে অফিস করেন। কাগজ বের হয়। কিন্তু বিক্রি হয় না। রাস্তায় হকার নেই। অর্ধেকেরও বেশি জেলা থেকে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়েছে কাগজ পাঠাবেন না। বৃহস্পতিবার শুনলাম, ঢাকা ছাড়া আর কোথাও কাগজ পাঠানোর তাগিদ নেই। ঢাকার অবস্থাও ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। একটা সময় হয়তো কাগজ বন্ধ করে দিতে হবে। কলকাতার বহুল প্রচারিত ‘বর্তমান’ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা আসলে কোথায় আছি? ফেক নিউজের জ্বালায় অস্থির। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই যেন বিশেষজ্ঞ। এতে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের কলকারখানা এখনো চালু। কিন্তু কারা যেন খবর রটিয়ে দিয়েছে কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাস্তব অবস্থা, তা না হলেও ফেক নিউজ থামাবে কে? দু’-একজনকে গ্রেপ্তার করলেই তো ফেক নিউজ বন্ধ হবে না। দরকার জনসচেতনতা। দায়িত্বশীল আচরণ। আমার মতো লাখ লাখ মানুষ স্বেচ্ছাবন্দি। তাদের সময় কীভাবে কাটছে তা অনুমান করতে পারি। খেলা বন্ধ না হলে সময়টা ভালো কাটতো। বিশেষ করে ইউরোপের ফুটবল লীগগুলো চালু থাকলে কথাই ছিল না। ইতিহাসবিদরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যা হয়নি এখন তা হচ্ছে। দুনিয়া লকডাউন হলে খুশি হবেন কে? ডোনাল্ড ট্রাম্প! না, তার ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। অবশ্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বড়াই করে বলছেন, রাশিয়া মুক্ত। মাত্র ১ জন মারা গেছে। এটা কি শতভাগ বিশ্বাসযোগ্য খবর? নাকি ফেক নিউজ। লন্ডন থেকে এক বন্ধু ফোন করে বললেন, এর কিছুটা সত্যতা আছে। রাশিয়া শুরু থেকেই অনেকটা লকডাউনে চলে গিয়েছিল। এ জন্য সুফল পেয়েছে। আফ্রিকার মাত্র ৭টি দেশ এখনো করোনা মুক্ত। তবে ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল- এটা কবুল করতেই হয়।

বিদেশ ফেরতদের আমরা যেভাবে গ্রহণ করেছি তা ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এখন আর কাউকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই। বরং ভুল থেকে আমাদের কিছু শিখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটা জাতীয় দুর্যোগ। এটা এককভাবে সরকারের পক্ষে মোকাবিলা করা কঠিন। তাই সবাইকে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এটা হতে পারে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। এতে থাকবেন সব দলের প্রতিনিধি। বিশেষজ্ঞদেরও রাখতে হবে এই টাস্কফোর্সে। অসুস্থ রাজনীতি যেন আমাদেরকে অন্ধ না রাখে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের আগাম বার্তা আমলে না নিলে আমরা বড় ধরনের বিপদে পড়ে যেতে পারি। তারা তো বলছেন, কয়েক লাখ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। স্তিমিত হয়ে যেতে পারে কোটি মানুষের প্রাণশক্তি। অর্থনীতির অবস্থা সহজেই অনুমান করতে পারি। যদি বাস্তব অবস্থা দেশকে এবং বাইরের দুনিয়াকে না জানাই তাহলে সহমর্মিতা থেকেও আমরা বঞ্চিত হবো। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন আর কোনো ভুল করা চলবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *