বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপে মানুষ ভীত ও উদ্বিগ্ন। এই আতঙ্কের পেছনে সন্দেহাতীতভাবেই উপযুক্ত কারণ রয়েছে। মানুষ এমন কোনো ভাইরাসের জন্য প্রস্তুত ছিল না। প্রতিদিন বাড়ছে এর বিস্তারের পরিধি। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তার উপর, এর আচার-আচরণ এখনো তদন্তাধীন। এ রকম সপর্শকাতর মুহূর্তে, দ্য নিউজপেপার্স ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) বিশ্বজুড়ে সকলের মর্মস্পর্শী সহমর্মিতা ও একাত্মতা প্রকাশ করছে।
এটা একটা ভয়াবহ সময়। কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই।
আমরা সবাইকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে, আমরা পত্রিকার মানুষরা যে কোনো জাতীয় জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগে জনগণের পাশে ছিলাম। করোনা ভাইরাসের এই সময়ে পত্রিকাগুলো সহায়ক, নিবারক ও সচেতনতা বৃদ্ধিকারী লেখা ছাপছে। দৈনিকগুলো নিয়মিত হারে চলতি গবেষণা, নতুন স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতির পাশাপাশি এ বিষয়ে সফলতায় খবর প্রকাশ করছে।
আমরা নিদারুণ বেদনা নিয়ে লক্ষ্য করছি যে, মানুষের এমন দুর্বল মুহূর্তে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি অংশ অনির্ভরযোগ্য তথ্য ছড়িয়ে এই পরিস্থিতি আরো নাজুক করে তুলছে। পত্রিকা থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে এমন অযাচিত ও ভিত্তিহীন ধারণার কারণে পত্রিকা পড়া থেকে বিরত থাকছেন। আদতে, এসব ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। নিউ ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত দ্য ইউনাইটেড স্টেটস জার্নাল অব মেডিসিনের গবেষণা অনুসারে, ভাইরাসটি বাতাসে সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টা, কার্ডবোর্ডে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠা ৭ কলাম ৪
একদিন, প্লাস্টিকে তিনদিন, স্টেইনলেস স্টিলে তিনদিন টিকে থাকতে পারে।
তবে, দীর্ঘদীনের গবেষক, অধ্যাপক ক্যারোলাইন মাখামার জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, কোনো বস্তুর উপরিভাগে ভাইরাসটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অনেকের কাছে এটা ভয়াবহ লাগলেও, বস্তুর উপরিভাগ থেকে ভাইরাসটির সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম, প্রতি হাজারে একটি।
কাগজ বা নিউজপ্রিন্ট ভাইরাসটি বেঁচে থাকার জন্য সহায়ক, এমন কোনো প্রমাণিত তথ্য নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে, বাণিজ্যিক পণ্যগুলোর ভাইরাস বহনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন তাপমাত্রায় বহন করা পণ্যগুলো থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র বলেছে যে, পত্রিকা থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর কোনো ঝুঁকি নেই।
এরপরও নোয়াব আমাদের সকল পত্রিকার পক্ষ থেকে পত্রিকার কর্মী ও হকারদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত নোয়াব ঢাকা ও এর বাইরে কর্মী ও হকারদের মধ্যে মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেছে। ভবিষ্যতেও এসব কর্মসূচি জারি থাকবে।
এমন সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তথ্য জানা ও কী ঘটছে সে বিষয়ে জানানো। করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচানোর সেরা উপায় হচ্ছে সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য তথ্য জানা। সংবাদ প্রকাশনা একটি পেশাদারি কাজ। কোনো তথ্য প্রকাশের আগে তা অভিজ্ঞ ও ওয়াকিবহাল হাতের মাধ্যমে সযত্নে খতিয়ে দেখা হয়। যেকোনো তথ্যের জন্য, পত্রিকা বিশ্বজুড়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। করোনা ভাইরাস মহামারীর মতো সময়ে, পত্রিকাগুলো সজাগ বন্ধুর মতো পাঠকদের পাশে রয়েছে, তাদের প্রকৃত নিরাপত্তা, সচেতনতাবোধ ও সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য।
আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, সকলের সুস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও ভালো থাকা নিশ্চিত করা। আমরা সকলকে পত্রিকা পড়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
নিউজপেপারস ওনারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।