সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য আদালতের অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্নে দুই ধরণের অভিমত ব্যক্ত করেছেন আইনজীবীরা। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খানের দুইমত। আর অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। তার এ মতকে সমর্থন করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। দুদকের আইনজীবী বলছেন, এক্ষেত্রে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড স্থগিত করে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এমপি।
তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার ফোজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় তার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের অনুমোদনের প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার আত্মীয়রা মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য আবেদন করেছে। এই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে সরকার শর্তসাপেক্ষে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দিচ্ছে। এ কারণে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, পুরো সাজা ক্ষমা করে মুক্তি দিতে চাইলে সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে।
দেশের প্রবীণতম ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি অনেকদিন ধরেই বলে আসছি, মানবিক কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার ক্ষমতাবলে সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে। সরকার সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের শুভবুদ্ধি হয়েছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
মুক্তির জন্য আদালতের অনুমতির প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার সাময়িক সময়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিচ্ছে। তাই এখানে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার ক্ষমতাবলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুনেছি। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(২) ধারা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। কারণ, নিম্ন আদালতে দুটি মামলায় সাজা হয়েছে। এরমধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিয়েছিল। হাইকোর্ট এই সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়। এই সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার আপিল বিচারাধীন। এই মামলায় আপিল বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।
তিনি বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে নিম্ন আদালত। এই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল বিচারাধীন। তাই এই মামলায় হাইকোর্টের অনুমতি লাগবে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইলে সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যাহা মানিয়া নেয় সেই শর্তে তাহার দণ্ড কার্যকরীকরণ স্থগিত রাখিতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশ বিশেষ মওকুফ করিতে পারিবেন।’
আর ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যখন কোন দণ্ড স্থগিত রাখা বা মওকুফ করিবার জন্য সরকারের নিকট আবেদন করা হয়, তখন যে আদালত উক্ত দণ্ড দিয়াছিলেন বা অনুমোদন করিয়াছিলেন সেই আদালতের প্রিজাইডিং জজকে সরকার উক্ত আবেদন মঞ্জুর করা উচিত কিংবা মঞ্জুর করিতে অস্বীকার করা উচিত কিনা সে সম্পর্কে তাহার মতামত ও মতামতের কারণ বিবৃত করিতে এবং এই বিবৃতির সহিত বিচারের নথির নকল অথবা যে নথি বর্তমানে আছে সেই নথির নকল প্রেরণ করিবার নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবেন।’
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। এই আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। এ ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। সেদিনই তাকে কারাগারে নেওয়া হয়। সেই থেকে তিনি কারাবন্দি। এ মামলায় হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এক রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন।