স্টাফ রিপোর্টার | গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় ষষ্ঠ দিন পার করেছেন বিরোধী জোটের শীর্ষনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে দ্বিতীয় দফা কার্যালয়ের প্রধান ফটকে দেয়া তালা খুলে দেয় পুলিশ। ৫ই জানুয়ারি সমাবেশকে কেন্দ্র করে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়াকে আটকাতে ওই দিন দুপুরে কার্যালয়ের প্রধান ফটকের বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর থেকে কয়েকজন নারী পুলিশ সদস্য মূল ফটক ঘেঁষে দাঁড়াতেন। গণমাধ্যমের দৃষ্টি এড়াতেই তালাটি ঢেকে রাখতেন তারা। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে তালাটি খুলে দেয়া হয়। বিকালেই ফের কার্যালয়ের ফটকে তালা দেয়া হয়। গতকাল সকালে আবার তালা খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে নারী পুলিশ সদস্যরা কার্যালয়ের ফটক থেকে কয়েক গজ দূরে অবস্থান নেন। ফলে গতকাল দিনভর মূল ফটকের বাইরে কোন তালা লক্ষ্য করা যায়নি। অবশ্য তালা খোলা বা লাগানোর কথা পুলিশের কেউ স্বীকার করেনি। এদিকে কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়া হলেও সরানো হয়নি জলকামান ও পুলিশের ভ্যানের ব্যারিকেড। এছাড়া কার্যালয়ের সমানের সড়কের দুইপাশে যথারীতি পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানো আছে। ওই সড়কে সাধারণ মানুষ ও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাংবাদিকদেরও পরিচয়পত্র দেখিয়ে ওই সড়কে প্রবেশ করতে হয়। তবে সকাল থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা ঢিলেঢালা থাকলেও বিকালের দিকে সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে নারী পুলিশ সদস্যদের লাঠি হাতে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ কবির বলেন, নিরাপত্তার জন্য পুরুষ সদস্যরা অস্ত্র আর নারী সদস্যরা লাঠি ব্যবহার করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের মতোই আছে। বাড়ানো কমানো হয়নি। ওদিকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দলের কোন নেতাকর্মী কিংবা সুশীল সমাজের কেউ আসেননি। তবে সন্ধ্যা ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার কার্যালয়ে যান বাংলাদেশ উমেন্স জার্নালিস্ট ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভানেত্রী রোজী ফেরদৌসের নেতৃত্বে চার সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল। মিনিট বিশেক পর কার্যালয় থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের রোজী ফেরদৌস বলেন, কয়েকদিন ধরে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়াকে দেখতে এসেছি ?আমরা। তার শরীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে অবরোধ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কোন আলাপ-আলোচনা হয়নি। আমরা কেবল তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে এসেছি এবং কুশল বিনিময় করেছি। এদিকে চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল সকাল বেলাটা তিনি ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। ঘুম থেকে ওঠে সকালের নাস্তা সারেন। এরপর অবরোধ কর্মসূচি ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে পূর্বঘোষিত সমাবেশকে ঘিরে ৩রা জানুয়ারি রাতে গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর ৫ই জানুয়ারি বেলা ১২টার দিকে কার্যালয়ের তিনটি ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। ওইদিন বিকালে কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে পেপার সেপ্র নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশি বাধা পেয়ে গেটেই দাঁড়িয়েই সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচী ঘোষণা তিনি। এরপর থেকে টানা ছয়দিন ধরে কার্যালয়েই অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন যাপন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুলশানের নিজ বাসভবনে টানা ১৫ দিন অবরুদ্ধ ছিলেন খালেদা জিয়া।