আজ ১৭ মার্চ। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বছরব্যাপী জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন শুরু আজ। আজ মঙ্গলবার জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এ দিনে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান। মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন। মা সায়েরা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। মা-বাবা উভয়েই এলাকায় সজ্জন, পরোপকারী ও পরহেজগার লোক ছিলেন। শেখ লুৎফর রহমানের চার মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। তার সহধর্মিণীর নাম বেগম ফজিলাতুন্নেছা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২৭ সালে গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জের মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সাল থেকে চার বছর জটিল চক্ষুরোগের অস্ত্রোপচারের কারণে তার লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি হয়। এরপর ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
বঙ্গবন্ধুর সারাটি জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি নিপীড়িত মানুষের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তিনি ছিলেন এ দেশের মাটি ও মানুষের জীবন সংগ্রামের প্রতীক। সমাজের কথিত এলিট শ্রেণীর চেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অধিক জনপ্রিয় ছিলেন। তার গণমুখী ভূমিকা একপর্যায়ে তাকে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের নয়নের মণিতে পরিণত করে।
বাংলা উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। উপমহাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ সাহেব হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং তার উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ-পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা স্বায়ত্তশাসন পরিকল্পনা পেশ করেন। ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রধান ছিল বর্ধিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন; যার কারণে তিনি জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। কিন্তু তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের আলোচনা বিফলে যাওয়ার পর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে, তবে তা কার্যকর হয়নি।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে বিবিসির এক জরিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময়ে। তখন স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবি নিয়ে তাদের কাছে যান শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। সেখানে তিনি এক বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স পাস করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান মাওলানা আজাদ কলেজ) আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন।
এই কলেজ থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতায় ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় তিনি সোহরাওয়ার্দীর সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক তৎপরতায় শরিক হন। দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক তৎপরতার সূচনা ঘটে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণপরিষদের অধিবেশনে বলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণ-অসন্তোষ দেখা দেয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনে শরিক হন এবং একপর্যায়ে গ্রেফতার হন।
১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আবার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন; যার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিমানা করা হয়। ১৯৫০ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের পূর্ব পাকিস্তানে আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগ ঢাকায় দুর্ভিক্ষবিরোধী মিছিল বের করে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেয়ায় শেখ মুজিব আটক হন। তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান জেলে অনশন শুরু করেন। তার এই অনশন ১৩ দিন কার্যকর ছিল। ২৬ ফেব্রুয়ারি তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন শেষে দলের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। একই বছরের ১৪ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যান্য দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে বিপুল ব্যবধানে বিজয় অর্জন করে; যার মধ্যে ১৪৩টি আসনই আওয়ামী লীগ লাভ করে। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জে বিজয় লাভ করেন। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শক্তিশালী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান। ১৫ মে তাকে কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয়। ৩০ মে করাচি থেকে ঢাকা ফেরার পর বিমানবন্দর থেকেই তাকে আটক করা হয়। ২৩ ডিসেম্বর তিনি মুক্তিলাভ করেন।
১৯৫৫ সালের ৫ জুন শেখ মুজিব আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। ১৭ জুন আওয়ামী লীগ পল্টন ময়দানে আয়োজিত এক সম্মেলনে ২১ দফা দাবি পেশ করেন, যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনই ছিল আন্দোলন-সংগ্রাম আর জেল জুলুমে ভরা। তৎকালীন পাকিস্তানে এমন একটি কথা প্রচলিত ছিল যে ‘এখানে গাড়ির চাকা পাংচার’ হলেও শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হতো। তার জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছে কারাগারে। বাংলাদেশের কোনো নেতাই তার মতো এত দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাননি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ও ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের যুগান্তকারী আহ্বান জানান। তৎকালীন পাকিস্তানের এ অংশে শুরু হয় বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
দিনটি উপলক্ষে সরকারিভাবে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। আজ থেকে আগামী বছর ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
রাত ৮টায় শুরু মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা : এ দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ রাত ৮টায় আতশবাজির মধ্য দিয়ে শুরু হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা। পরে দেশের সব টেলিভিশন, বিদেশী টেলিভিশন ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একযোগে প্রচারিত হবে ‘মুক্তির মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষণ থাকবে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে একটি কবিতাও শোনা যাবে ওই অনুষ্ঠানে। আতশবাজির মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে পিক্সেল ম্যাপিংয়ের মধ্য দিয়ে।
রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে গতকাল সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান টেলিভিশনেই প্রচারিত হবে। টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিশু সমাবেশ হবে না। আতশবাজি করা হবে জনসমাগম এড়িয়ে। তিনি বলেন, মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান প্যারেড গ্রাউন্ডে হওয়ার কথা ছিল। এখন সেখানে কোনো অনুষ্ঠান হবে না। আমরা টিভি প্রোগ্রাম তৈরি করেছি। তাতে আতশবাজি ও লেজার শো থাকবে। বঙ্গবন্ধু রাত ৮টার দিকে জন্ম নিয়েছিলেন। আমরা সেই ক্ষণে উৎসব করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে বিশ্বের সব প্রান্তে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠান শেষ মুহূর্তে স্থগিত করতে হয়। সে জন্যই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ধারণ করা অনুষ্ঠান প্রচার করব।
কামাল চৌধুরী আরো বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজি সরাসরি প্রদর্শনের পর আমরা ধারণ করা অনুষ্ঠানে যাবো। এ অনুষ্ঠান শুরু হবে শিশুকণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর প্রচারিত হবে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের বাণী। এরপর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সম্প্রচারিত হবে মুজিববর্ষের থিম সং। এতে দেশের প্রথিতযশা শিল্পীদের সাথে কণ্ঠ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা। এ অনুষ্ঠানে পিতাকে নিয়ে শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করবেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ৪০ মিনিটের একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা রয়েছে। দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকছে যন্ত্রসঙ্গীত। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নৃত্য পরিচালক আকরাম খানের পরিচালনায় থাকছে থিয়েট্রিক্যাল পারফরম্যান্স। শেষে থাকবে পিক্সেল ম্যাপিং। আতশবাজির মতো এটিও সরাসরি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জানান, অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনেতা ও সংস্থার প্রধানদের বাণী প্রচারিত হবে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের বর্তমান রাষ্ট্রপতি বিদ্যা ভান্ডারি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ আল-ওথাইমিন প্রমুখ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্মারক নোট ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় গণভবনে এগুলো উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া অন্য যেসব আয়োজন ছিল সেগুলো করোনাভাইরাসের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করে আয়োজন করা হবে। তার আগ পর্যন্ত অধিক জনসমাগমের কোনো আয়োজন থাকছে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে র্যালি/ রোডমার্চের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা সেনানিবাসের সিগন্যাল গেট থেকে শুরু হয়ে শিখা অনির্বাণে গিয়ে এটি শেষ হবে। এ ছাড়া একই সময়ে বিমানবাহিনীর র্যালি ঢাকা সেনানিবাসের সৌদি কলোনি মাঠ থেকে শুরু করে শহীদ জাহাঙ্গীর গেট হয়ে আবার সৌদি কলোনি মাঠে গিয়ে শেষ হবে।
এ দিকে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত করতে মুজিববর্ষে অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে তিনি আরো বলেন, এ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করলেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব শিশুদের কল্যাণে বর্তমানকে উৎসর্গ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয়ে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সব শিশুর সম-অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে পিতা-মাতা, পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুর প্রতি সহিংস আচরণ এবং সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।